নাজিমুল হোসেনের গলায় বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বোঝাই যাচ্ছিল না ৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন!

জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় দিনে আজ ৪০০ মিটার হার্ডলসে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ বছর বয়সী অ্যাথলেট নাজিমুল। কিছুক্ষণ পরই মেয়েদের ৪০০ মিটার হার্ডলসেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। তিন বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন সেনাবাহিনীর বর্ষা খাতুন।

৪০০ মিটার হার্ডলসে ছেলেদের বিভাগে সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ৫১.

৮৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেটি গড়েছিলেন আবদুল রহিম নঈম। রেকর্ডের পাতা থেকে তাঁকে সরাতে নাজিমুল সময় নিয়েছেন ৫০.৮৪ সেকেন্ড।

জাতীয় প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বার অংশ নিয়েই এ রেকর্ড গড়লেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার নাজিমুল। ৪০০ মিটার হার্ডলসে প্রথমবার জেতেন রুপা, দ্বিতীয়বার সোনা। এবার রেকর্ড।

তবে এমন রেকর্ড গড়েও নাজিমুলের কণ্ঠ ধীরস্থির, ‘রেকর্ড করে খুশি লাগারই কথা। আমিও খুশি। আসলে আমার কোচ এবং সহপাঠীরা বলতেন, এই রেকর্ডটা আমার পক্ষে ভাঙা সম্ভব। অবশেষে সেটি করতে পেরে আলহামদুলিল্লাহ।’

অথচ নাজিমুল ভাবেনইনি অ্যাথলেট হবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা পূরণ হয় ২০১৭ সালে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরই অ্যাথলেটিকসে আসা। নিজেই বলেন, ‘স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলেছি; কিন্তু অ্যাথলেটিকস কাকে বলে, সেভাবে জানতাম না। আর্মিতে আসার পরই আমি অ্যাথলেটিকসে আসি।’

২০২১ সালে প্রথমবার সেনাবাহিনীর মূল দলে সুযোগ পান নাজিমুল। সে বছর সেনাবাহিনীর আন্তইউনিটে দৌড়ান ৪০০ মিটারে। তাতে সোনা জেতেন। পরে পছন্দের ইভেন্ট হার্ডলসে মনোযোগ দেন। সামনে এসএ গেমসে ভালো করার স্বপ্ন দেখছেন। ভালো প্রশিক্ষণ পেলে সোনা জেতাও সম্ভব মনে করছেন, ‘যে টাইমিং করেছি...আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো হয়ে যাবে। তবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যদি আরেকটু সহযোগিতা করা হয়, তাহলে ভালো হবে।’

মাগুরার ২৪ বছর বয়সী বর্ষা খাতুন ৪০০ মিটার হার্ডলসে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন ১ মিনিট ০৪.৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ২০২২ সালে একই দলের লিবিয়া খাতুন রেকর্ড গড়েন ১ মিনিট ০৪.৭০ সেকেন্ডে।

জেলা পর্যায়ে খেলে উঠে এসেছেন বর্ষা। কোচ আমির আলী তাঁকে চট্টগ্রাম বিজেএমসিতে নিয়ে যান। ২০১৫ সালে ঠিকানা হয় সেনাবাহিনী। ৪০০ মিটারে ২০২২ সালে সিনিয়র পর্যায়ে সোনা জেতেন। তবে এবার পায়ে ব্যথা থাকলেও নিক্যাপ পরে দৌড়েছেন।

ব্যাথনাশক ওষুধ খেয়ে নেমেছেন জানিয়ে বর্ষা বলেন, ‘এবার আগে থেকেই আমি এবং আমার কোচ চেয়েছিলাম রেকর্ড করব। ইনশাআল্লাহ সেটা করতে পেরেছি, সে জন্য খুবই খুশি।’ স্বপ্ন দেখছেন এসএ গেমস নিয়েও, ‘এখন যে ছন্দে আছি, আশা করি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেডেল জিততে পারব।’

দিনটা আনন্দে কেটেছে জহির রায়হানেরও। জাতীয় প্রতিযোগিতায় দশমবার জিতেছেন ৪০০ মিটারের সোনা। ২০১৮ থেকে ১০ বার খেলেছেন এবং জিতেছেন ১০ বারই। ২০২২ সালে খেলা হয়নি ধর্ষণ মামলায় জেলে থাকায়। আজ ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছেন নৌবাহিনীর হয়ে।

সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত জহির বলেন, ‘সামনে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দেওয়া হলে ভালো করার চেষ্টা করব। সব সময় বলে এসেছি, আশা করি সামনে আমাদের নিয়ে ভালো পরিকল্পনা করা হবে।’

২০১৯ সালে মিলজার হোসেনের রেকর্ড ভাঙেন জহির। কিন্তু এরপর আর ৪০০ মিটারে রেকর্ড গড়তে পারছেন না।

কেন? জহিরের কথায়, ‘২০১৭ সালে আমি বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলে আলোচিত হয়েছিলাম। এর পর থেকে আমাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। দেশের বাইরে অনুশীলনের সুযোগ পাইনি। বারবার আশ্বাস দিয়েও কিছুই হয়নি। এখন আশা করছি বর্তমান কমিটি কিছু করবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ৪০০ ম ট র ন র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথমবারের মতো দেশে সংযোজিত এসইউভি গাড়ি আনল প্রোটন

র‍্যানকন কারস লিমিটেড প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সংযোজিত প্রোটন এক্স৭০ গাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রোটন বাংলাদেশের র‍্যানকন শোরুমে গাড়িটি উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নতুন গাড়ির সঙ্গে থাকছে পাঁচ বছর বা দেড় লাখ কিলোমিটার ওয়ারেন্টি। দেশে সংযোজন করা প্রথম প্রোটন এক্স৭০ কেনার সুযোগ মিলছে। গাজীপুরের কাশিমপুর, ভবানীপুরে র‍্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত র‍্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এই গাড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রোটন এক্স৭০ একটি সি-সেগমেন্টের কমপ্যাক্ট ক্রসওভার এসইউভি, যার নকশা বেশ আকর্ষণীয়। এতে রয়েছে প্রোটনের সিগনেচার ইনফিনিট উইভ গ্রিল, যা গাড়ির সামনের অংশে শক্তিশালী ও আলাদা পরিচয় তৈরি করে।

গাড়িটিতে রয়েছে ইন্টেলিজেন্ট হাই বিম কন্ট্রোল (আইএইচবিসি) হেডল্যাম্প, ডেলাইট রানিং ল্যাম্প (ডিআরএল), অটো রেইন-সেন্সিং ওয়াইপার এবং প্যানোরামিক সানরুফ, যা কেবিনে খোলামেলা ও আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। গাড়িটিতে আছে স্টাইলিশ ১৯ ইঞ্চি অ্যালয় রিম এবং ২০০ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, যা একে করেছে আরও শক্তিশালী। গাড়িটিতে রয়েছে টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, যেখানে কথা বলে (হাই প্রোটন) গাড়ির ফিচারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে আছে অনলাইন নেভিগেশন, মিউজিক স্ট্রিমিং, আবহাওয়ার আপডেট, স্মার্টফোন কানেকটিভিটি, ৬টি ইউএসবি পোর্ট, কি-লেস এন্ট্রি, ড্রাইভ মোড সিলেকশন, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা এবং উন্নত ড্রাইভার অ্যাসিস্টেন্স সিস্টেম (এডিএএস)। প্রোটন এক্স৭০-এ রয়েছে ১.৫ লিটার টার্বোচার্জড টিজিডিআই (টিজিডিআই) পেট্রল ইঞ্জিন। আছে ৭ স্পিড ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন (ডিসিটি), সঙ্গে ম্যানুয়াল মোডও রয়েছে, যা গিয়ার পরিবর্তনকে করে মসৃণ ও দ্রুত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে র‍্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. বদিউজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় দেশে গাড়িটি সংযোজন করা হচ্ছে। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টির এই গাড়ির দাম পড়বে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অনুষ্ঠানে র‍্যানকন কারস লিমিটেডের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে প্রিমিয়াম এসইউভির চাহিদা বাড়ছে। প্রোটন বাংলাদেশে গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে, বিশেষ করে ভলভো ও লোটাসের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রোটন এক্স৭০ উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে এসেছে। বিশ্বমানের এসইউভি আমাদের বাজারে আরও সহজলভ্য করে তুলতে স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল একটি বড় পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। এই গাড়ি থেকে টেকসই ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা মিলবে। গাড়িটি সি-সেগমেন্ট এসইউভি মানে যেসব গাড়ির দৈর্ঘ্য ৪.৪ মিটার থেকে ৪.৬ মিটার সেই ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম দামের গাড়ি। সি-সেগমেন্টের এসইউভি মডেলের বিভিন্ন গাড়ির দাম বর্তমানে ৪১ লাখ টাকা থেকে ৮৯ লাখ টাকা পর্যন্ত। সাশ্রয়ের হিসেবে এই গাড়ি এখন পর্যন্ত বাজারের সবচেয়ে সাশ্রয়ী সি-সেগমেন্ট এসইউভি। এই গাড়ির ১.৫ লিটার টার্বোচার্জড টিজিডিআই ইঞ্জিন কম জ্বালানি খরচে বেশি মাইলেজ দেয়। এক লিটার জ্বালানিতে গাড়িটি সর্বোচ্চ ১৪ কিলোমিটার চলতে পারে। ঢাকার যানজটের বিবেচনায় গাড়িটি ৭ কিলোমিটার রাস্তা সহজে যেতে পারছে।

গাড়ির প্রথম ক্রেতা কানাডাপ্রবাসী শেখ সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বাজারে এখন অনেক মডেলের গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আমি অনেক দিন ধরে গাড়ি চালাই। নতুন এই মডেলের গাড়িটি চালিয়ে বেশ আনন্দ পাচ্ছি। গাড়িটি চালিয়ে কুয়াকাটা গিয়েছিলাম স্বাচ্ছন্দ্যে।

নিরাপত্তা ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রোটন এক্স৭০-এ যুক্ত করা হয়েছে অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম (এডিএএস)। বাংলাদেশের অনিশ্চিত ও জটিল ট্রাফিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সিস্টেম নিয়ে এসেছে প্রোটন। গাড়িটিতে রয়েছে অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল (এসিসি) এবং অটোনোমাস ইমার্জেন্সি ব্রেকিং (এইবি), যা যানজটে চলার সময় নিজে থেকে গতি নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রয়োজনে গাড়ি থামিয়ে দেয়। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য আছে ব্লাইন্ড স্পট ইনফরমেশন সিস্টেম (বিএলআইএস) এবং লেন ডিপারচার ওয়ার্নিং (এলডিডব্লিউ), যা ব্যস্ত বা সংকীর্ণ রাস্তায় বা হাইওয়েতে হঠাৎ লেন পরিবর্তন বা ওভারটেকিংয়ের সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লর্ডসে ফাইনাল, ভেন্যু ও সময় ঘোষণা করল আইসিসি
  • মায়ামির স্বপ্নভঙ্গ, ইতিহাস গড়লো ভ্যানকুভার এফসি
  • দেশ গড়ার নায়কদের জন্য ফ্লাইট এক্সপার্টের বিশেষ উদ্যোগ
  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • প্রথমবারের মতো দেশে সংযোজিত এসইউভি গাড়ি আনল প্রোটন
  • এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় কি সত্যিই সম্ভব
  • সম্পর্কের ৫০ বছর: বাংলাদেশে প্রথমবার চীনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা