Samakal:
2025-08-01@18:25:23 GMT

নিয়োগ পেয়েও বঞ্চনা!

Published: 18th, February 2025 GMT

নিয়োগ পেয়েও বঞ্চনা!

মঙ্গলবার ১৩তম দিনের মতো আন্দোলন করেছেন তারা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। নানা ঝড়-ঝাপটা সহ্য করেও তারা দাবি আদায়ের আন্দোলনে অনড়। বারবার তারা পুলিশের লাঠিপেটা ও জলকামানের অভিযানের শিকার হয়েছেন। দিনের বেলা তারা শাহবাগে জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন; রাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে ঘুমান। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। স্বাভাবিক কারণেই অনেকে তাদের বাচ্চা নিয়ে আন্দোলন করছেন। অথচ সঠিক সময়ে নিয়োগ পেলে এতদিনে হয়তো তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতেন। 

তাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, একে দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। এর আগে তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত শিক্ষক নিয়োগও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ফলে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন। যখন তাদের নিয়োগ হওয়ার কথা, তখনই নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে আদালত পুরো সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষকেরই নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন; একই সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন। সেই ৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই তারা আন্দোলনরত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অবশ্য তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। মঙ্গলবার এ আপিলের ওপর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আদালত সেটি পিছিয়ে ২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন। মঙ্গলবারই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এও বলেছেন, আমরা আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। 

সমস্যা মূলত হয়েছে কোটা নিয়ে। আমরা দেখেছি, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছিল। ২৪-এর জুলাইয়ের শুরু থেকে আন্দোলনটি তীব্র হলেও আওয়ামী লীগ সরকার কোটার বিষয়টি সমাধানের জন্য বারবার আদালতের দোহাই দিয়েছিল। আদালত শেষ পর্যন্ত ২৩ জুলাই কোটা সংস্কারের রায় দিয়েছিলেন বটে; ততদিনে গণহত্যা চালানোর কারণে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। এখন যারা তৃতীয় দফা নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট করেছেন, তারা দাবি করছেন, ২৩ জুলাইয়ের রায়ের ভিত্তিতে এ ফল তৈরি করা হয়নি। আমার মতে, এই দাবি অযৌক্তিক এ কারণে যে, এই চাকরির জন্য ২০২৩ সালে প্রাথমিকের এ শিক্ষকদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তখনকার নিয়ম অনুসারেই সবাই আবেদন করেন এবং বিভিন্ন দফায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে তারা নির্বাচিত হন। তা ছাড়া তৃতীয় দফার এ নিয়োগ প্রথম দুই দফার অনুরূপ। সেখানে যখন সবার নিয়োগ হয়েছে, একই নিয়মে এই শিক্ষকরা নিয়োগ পাওয়ার দাবিদার। 

মনে রাখতে হবে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধিমালার আলোকে, যেখানে কোটার বিষয়ও সরকারি অন্য চাকরি থেকে ভিন্ন। সব মিলিয়ে আজকে যারা আন্দোলনকারী, তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয় ন্যায্য বলে মনে হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই শিক্ষকদের নিয়োগের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার আরেকটু উদ্যোগী হলে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হতে পারে। ২ মার্চ আদালতে তারা ন্যায়বিচার পাবেন– এটাই প্রত্যাশা।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
[email protected]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন সরক র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ