শীতের রুক্ষতা শেষে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। চুল পড়া, খুশকিসহ নানা ধরনের সমস্যা বেড়ে যায় শীতে। বসন্ত খানিকটা স্বস্তির শ্বাস ফেলার সময়। তাই বলে একেবারে চুলের যত্ন নেওয়া বন্ধ করলে হবে না। কেননা, এ সময় ভ্যাপসা গরমে চুলের বারোটা বাজে। তাছাড়া বাইরের দূষণ ও ধুলাবালি তো আছেই। প্রাণবন্ত ও সুন্দর চুলের জন্য যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর পাশাপাশি চুলের ধরন বুঝে তেল মালিশ, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
শোভন মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা জানান, এ সময় নরমাল চুলের যত্নে ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। চুলে যেন রুক্ষভাব না আসে, এ জন্য কন্ডিশনার ময়েশ্চারাইজড হতে হবে। কন্ডিশনার ধোয়ার পর সিরাম দিয়ে চুল শুকিয়ে নিতে হবে।
তিনি জানান, রঙিন চুলের যত্নে কালার প্রোটেক্টেড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। সেই সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে কালার প্রোটেক্টেড কন্ডিশনার। হিট প্রোটেক্টেড সিরাম দিয়ে চুল শুকিয়ে ফেলতে হবে। এ আবহাওয়ায় বেশি দেরি না করে এক দিন পরপর চুলে শ্যাম্পু করলে চুল ভালো থাকবে। যারা বাইরে কাজ করেন, ধুলাবালির মধ্যে দিয়ে যাওয়া-আসা করেন তাদের চুলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত। বাড়িতে সময় না পেলে এ সেবাগুলো পার্লার থেকেও নিতে পারেন।
নির্জীব ও রুক্ষ চুলের যত্ন
শীত চলে গেলেও এ সময় চুলের সমস্যা রয়ে যায়। যত্নের অভাবে কারও কারও চুল অনেক রুক্ষ ও নির্জীব হয়ে পড়ে। আগা ফেটে যায়। গরম পড়তেই স্ক্যাল্প ঘামতে শুরু করে এবং চুলের গোড়া স্যাঁতসেঁতে ও ময়লা হয়ে যায়। এ জন্য নিয়ম মেনে চুলে শ্যাম্পু করতে হবে। চুল ধুতে ভারী কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। এতে চুলের স্বাভাবিক ময়েশ্চার নষ্ট হবে। খুশকি থাকলে শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে মাথার ত্বকে কুসুম গরম তেল ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। রূপবিশেষজ্ঞের ভাষ্যমতে, খুশকি তাড়াতে মেথি ও লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আবার চুলকে রুক্ষ করে তোলে। তাই চুল ধোয়ার পর ভালো মানের কন্ডিশনার লাগালে উপকার পাবেন।
নির্জীব চুলের যত্নে দুটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়েও লাগাতে পারেন। এটি পুরো চুলে লাগিয়ে মিনিট পাঁচেক ম্যাসাজ করুন। এরপর শাওয়ার ক্যাপ পরে আধা ঘণ্টা রাখুন। শুকিয়ে গেলে চুল ধুয়ে নিন।
কোন ধরনের হেয়ার প্যাক?
হেয়ার প্যাকের ঘরোয়া কনসেপ্টগুলো বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে মনে করেন শোভন সাহা। তিনি মনে করেন, চুলের যত্নে বাজারে যেসব হেয়ার মাস্ক ও কন্ডিশনার পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করাই ভালো। কারণ হারবাল পণ্যগুলো বাস্তবে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। তারপরও কেউ যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু প্যাক তৈরি করতে চান, সে ক্ষেত্রে রঙিন চুলের যত্নে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। মধু চুলের কালারকে আরও উজ্জ্বল করবে। যাদের চুল স্বাভাবিক তারা চুলকে আরও সফট করার জন্য টকদই ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় এমন ধরনের হেয়ার মাস্ক বা প্যাক ব্যবহার করা, যেখানে চুলের জন্য উপকারী সব ধরনের প্রোটিন আছে।
ডায়েটেও নজর রাখুন
চুল ভালো রাখতে ডায়েটেও নজর রাখতে হবে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, বায়োটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি রাখতে হবে। এ জন্য তৈলাক্ত মাছ যেমন ইলিশ, কই, মলা, চাপিলা; সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা ইত্যাদি খেতে হবে। এসব মাছ চুলকে ঘন ও কালো করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে হবে। কেননা, ডিমে উৎকৃষ্ট পরিমাণে প্রোটিন ও বায়োটিন আছে। এ ছাড়াও আছে সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-১২। তিসি, তিসির তেল, কুমড়ার বীজ, চিয়া বীজ, সয়াবিন ইত্যাদি খেতে হবে। ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাতে আখরোট, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম খেতে হবে। কেননা, বাদামে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাট থাকে। বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন ব্রকলি, ফুলকপি এবং রঙিন শাকসবজি যেমন পালংশাক, টমেটো, গাজর ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। সুন্দর চুলের জন্য প্রোটিন ও আয়রন দরকার। তাই স্বল্পমূল্যে প্রোটিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণে ডাল খেতে পারেন। ডালে জিংক ও ফোলেটও রয়েছে। এ ছাড়া ছোলা, টক দই, টক ফল যেমন বরই, আমলকী, লেবু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি খেলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। v
মডেল: জান্নাত আরা
ছবি: কাব্য
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র করত চ ল র জন য চ ল র যত ন ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।