ক্যালকেনিয়াম স্পার বা গোড়ালির হাড় বাড়ে কেন, সমাধান কী
Published: 20th, February 2025 GMT
অনেক সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন হাড়ে অতিরিক্ত হাড় গজায়। এর মধ্যে ক্যালকেনিয়াম (পায়ের হাড়) অন্যতম। এ বাড়তি হাড় গোড়ালির নিচে ও পেছনে গজায়। একে ক্যালকেনিয়াম স্পার বলে। গোড়ালির সবচেয়ে বড় হাড় ক্যালকেনিয়াম, যা দাঁড়ালে বা হাঁটলে প্রথম মাটির সংস্পর্শে আসে ও শরীরের পূর্ণ ওজন বহন করে। এর যেকোনো ক্ষুদ্র অসংগতিতেও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা যায় না ও খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়।
গোড়ালির হাড় বাড়ে কেন
বলা হয়, অসংগতিপূর্ণ জুতা পরলে ক্যালকেনিয়াম স্পার হয়।
পায়ের পেশি দুর্বল হলে পায়ের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে স্পার তৈরি হয়।
দীর্ঘদিন ধরে প্লান্টার ফাসা ও টেনডনের প্রদাহ হলে গোড়ালিতে অতিরিক্ত হাড় গজায়।
শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে স্পার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিসে হিল স্পার হতে পারে।
অনেকের এ সমস্যা বংশানুক্রমিকভাবে হতে পারে।
লক্ষণ
প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা অনেকক্ষণ বসার পর পা ফেলতে গেলেই ব্যথা শুরু হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা আস্তে আস্তে কমে। বিশ্রামরত অবস্থায় ব্যথা থাকে না।
অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে পায়ে ভর দেওয়া যায় না। অতিরিক্ত হাড় পেশি, টেনডন, ফাসা, রক্তনালি ও সড়বায়ুকে ট্রাকশন ইনজুরি করে। ফলে ব্যথাসহ টিস্যু জমে থাকে।
কখনো কখনো পায়ের তলা লাল হয়, হিলপ্যাড শুকিয়ে যায় এবং পা ফ্ল্যাট হয়; অর্থাৎ পায়ের আর্চ নষ্ট হয়ে যায়।
চিকিৎসা
ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে ব্যথা কমে আসবে। কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে স্টেরয়েড ইনজেকশন পুশ করলে ব্যথা দ্রুত নিরাময় হয়। ইনজেকশন পুশ করার সময় সতর্কতা দরকার। অন্যথায় হিলপ্যাড (গোড়ালি) শুকিয়ে যাবে ও রোগ ত্বরান্বিত হবে।
ফিজিক্যাল থেরাপি, যেমন এসডব্লিউডি, ইউএসটি এবং ওয়াক্স বাথ ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়।
চিকিৎসায় ভালো না হলে, রোগের পুনরাবৃত্তি হলে, হিলপ্যাড শুকিয়ে গেলে, পায়ে ভর দিতে অসুবিধা হলে ও হাড় বাড়তে থাকলে আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি প্রয়োজন হয়। এতে রোগের উপসর্গ দ্রুত লাঘব হয়।
প্রতিকার
উপযুক্ত মাপের ও নরম জুতা ব্যবহার করা উচিত।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আড়াআড়িভাবে পায়ের তলা ম্যাসাজ করতে হবে।
দিনে দুবার কুসুম গরম পানির সেঁক বা ঠান্ডা সেঁকে উপসর্গ নিরাময় হবে।
পায়ের তলা ও লেগের পেশির স্ট্রেচিং, নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে পারেন। পাশাপাশি একজন অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জনের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
ডা.
মো. মেহেদী হাসান, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও ট্রমা সার্জন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
কণ্ঠস্বরকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা
ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে, তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার ওপর। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষ যেমন গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টারের কর্মী, কণ্ঠশিল্পীদের জন্য কণ্ঠই সবকিছু।
কণ্ঠনালির প্রদাহএ প্রদাহ দুই ধরনের। সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস। ভাইরাস, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য কণ্ঠনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার করলে বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহারঅতিরিক্ত চিৎকারের কারণে যেমন স্বর ভেঙে যায়, তেমনি আবার মৌসুম বদলের সময়ও এমন সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাপমাত্রার তারতম্যের সময় কণ্ঠনালি বা টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ হিসেবে স্বর ভেঙে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগী স্বর ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন: কণ্ঠস্বরের ওপর যাঁদের খুব বেশি চাপ পড়ে (যেমন গায়ক, আবৃত্তিকার, শিশুদের শিক্ষক)। তাঁদের স্বরতন্ত্রীতে ছোট ছোট গোটা হতে পারে (নডিউল)। এ রকম হলে স্বর অস্বাভাবিক রয়ে যায় দীর্ঘদিন। স্বর ভাঙার অন্যান্য কারণ হলো থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসার, স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার ইত্যাদি।
মৌসুমের কারণে কণ্ঠনালির প্রদাহ হলে গলাব্যথা, জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ওজন বৃদ্ধি, শীতপ্রবণতা, দুর্বলতা, বিষণ্নতা, চিন্তায় ও কাজে ধীরতা, চুল পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ওজন হ্রাস, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করতে হবে● কণ্ঠস্বরের সমস্যা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
● আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
● কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হোন। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না।
● ধূমপান, অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
● ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন।
● অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
● অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার ও কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
● শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে, এটি কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতা বৃদ্ধিকারী যন্ত্র ব্যবহার করুন।
● গলা শুকনো থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা ক্ষতিকর।
● যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয়, তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি প্রধানত কণ্ঠের মাধ্যমে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাওয়ার বদভ্যাস কণ্ঠস্বরের নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই সঠিক কণ্ঠস্বর বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, অধ্যাপক, ইএনটি হেড নেক সার্জারি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা