একমাত্র ছেলে ওয়াশি উদ্দিন মাহিদের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি নাসির উদ্দিন। সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা বুকে নিয়ে দিন কাটছে তার।

৬ বছর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজারে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। নিহতদের একজন মাহিদ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নাসির উদ্দিনের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। তার সেই স্বপ্ন ওই রাতের ঘটনায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাসির উদ্দিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘ওই দিন বাসা থেকে মাহিদ নেমেছিল কোমল পানীয় খেতে। আর তখনই অগ্নিকাণ্ডে দেয়াল ধসে চাপা পড়ে মারা যায় সে।  একমাত্র ছেলে ছিল হাতের লাঠি। সেই ছেলেটা এভাবে মারা যাবে ভাবতেও পারিনি!’’

পুরান ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশন ও শহীদুল্লাহ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ওয়াশি উদ্দিন মাহিদ। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘তিন সন্তানের মধ্যে ওয়াশি ছিল সবার ছোট। বড় মেয়ে ২০১১ সালে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছেলেটা ২০১৯ সালে মারা গেল। একটা মেয়ে আছে তাকে বিয়ে দিয়েছি। এখন বুড়োবুড়ির সংসার। একমাত্র ছেলে, হাতের লাঠি ছিল, সেই ছেলেটা মারা গেল। এখন দেখার তেমন কেউ নাই। আল্লাহ দেখছেন।’’ 

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘সেদিন কতগুলো মানুষ অগ্নিকাণ্ডে মারা গেল! কাউকে কোনো অনুদান দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছিল। কিন্তু কেউ আমরা সেই টাকা পাইনি। সরকারও কিছু দেয়নি।’’

এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানান তিনি।

ওয়াশির চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন বলেন, ‘‘যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার পাশেই আমাদের বাসা। ওইদিন রাতে বাসা থেকে নিচে নেমে দোকান থেকে মোজো কিনে খাচ্ছিল সে। ওই সময় দেয়াল ধসে পড়ে। রাস্তায় তখন জ্যাম ছিল। দৌড়ে কোথাও যেতে পারেনি। দেয়ার চাপা পড়ে সে মারা যায়।’’

তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘‘এরপর মামলা হয়েছে। ছয় বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার পেলাম না। অথচ ভবন ও গোডাউনের মালিককে বাঁচাতে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এত দিন আমরা কিছুই বুঝিনি, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। রাষ্ট্রপক্ষে আগের যে আইনজীবী ছিলেন তিনি আমাদের সহযোগিতা করেননি। সাক্ষ্য গ্রহণের পর আমার থেকেও টাকা নিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে দিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হোক।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। 

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একম ত র ছ ল ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।

জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’

২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’