‘একমাত্র ছেলেটা ছিল হাতের লাঠি, মারা গেল!’
Published: 21st, February 2025 GMT
একমাত্র ছেলে ওয়াশি উদ্দিন মাহিদের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি নাসির উদ্দিন। সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা বুকে নিয়ে দিন কাটছে তার।
৬ বছর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজারে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। নিহতদের একজন মাহিদ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নাসির উদ্দিনের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। তার সেই স্বপ্ন ওই রাতের ঘটনায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাসির উদ্দিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘ওই দিন বাসা থেকে মাহিদ নেমেছিল কোমল পানীয় খেতে। আর তখনই অগ্নিকাণ্ডে দেয়াল ধসে চাপা পড়ে মারা যায় সে। একমাত্র ছেলে ছিল হাতের লাঠি। সেই ছেলেটা এভাবে মারা যাবে ভাবতেও পারিনি!’’
পুরান ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশন ও শহীদুল্লাহ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ওয়াশি উদ্দিন মাহিদ। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘তিন সন্তানের মধ্যে ওয়াশি ছিল সবার ছোট। বড় মেয়ে ২০১১ সালে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছেলেটা ২০১৯ সালে মারা গেল। একটা মেয়ে আছে তাকে বিয়ে দিয়েছি। এখন বুড়োবুড়ির সংসার। একমাত্র ছেলে, হাতের লাঠি ছিল, সেই ছেলেটা মারা গেল। এখন দেখার তেমন কেউ নাই। আল্লাহ দেখছেন।’’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘সেদিন কতগুলো মানুষ অগ্নিকাণ্ডে মারা গেল! কাউকে কোনো অনুদান দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছিল। কিন্তু কেউ আমরা সেই টাকা পাইনি। সরকারও কিছু দেয়নি।’’
এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানান তিনি।
ওয়াশির চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন বলেন, ‘‘যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার পাশেই আমাদের বাসা। ওইদিন রাতে বাসা থেকে নিচে নেমে দোকান থেকে মোজো কিনে খাচ্ছিল সে। ওই সময় দেয়াল ধসে পড়ে। রাস্তায় তখন জ্যাম ছিল। দৌড়ে কোথাও যেতে পারেনি। দেয়ার চাপা পড়ে সে মারা যায়।’’
তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘‘এরপর মামলা হয়েছে। ছয় বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার পেলাম না। অথচ ভবন ও গোডাউনের মালিককে বাঁচাতে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এত দিন আমরা কিছুই বুঝিনি, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। রাষ্ট্রপক্ষে আগের যে আইনজীবী ছিলেন তিনি আমাদের সহযোগিতা করেননি। সাক্ষ্য গ্রহণের পর আমার থেকেও টাকা নিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে দিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হোক।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একম ত র ছ ল ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।