শহীদ মিনারে নিজ ভাষায় কবিতা পড়লেন বিদেশি ১০ নাগরিক
Published: 21st, February 2025 GMT
ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে হাজির বিদেশি ১০ নারী-পুরুষ। শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এরপর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পাঠ করেন নিজ নিজ ভাষায় কবিতা। মাতৃভাষায় ব্যক্ত করেন ভাষা নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তিও। আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে নির্মিত জেলার প্রথম শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
বিদেশি এসব নাগরিকেরা জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখস্তান, সিরিয়াসহ ১০টি দেশের। সবাই কক্সবাজারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁদের নিয়ে কবিতা পাঠের এই আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের (কসউবি) প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন—কসউবি ছাত্র পরিষদ।
‘সার্ধশতকে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জাপানের নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, ‘নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। এই স্কুল দেখে আমার নিজের স্কুল ও সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজের দেশ, বাড়ি, প্রিয়জন ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে।’
নাইজেরিয়ার নাগরিক হাওয়া হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। কসউবির এই উদ্যোগের কারণে আমরা বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ এক জায়গায় বসে একসঙ্গে ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে পেরেছি, এটা অনেক আনন্দের।’
ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বাংলাদেশে আছেন কয়েক বছর ধরে। বিভিন্ন ভাষাভাষীর নাগরিকদের সঙ্গে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পেরে বেশ খুশি তিনি। হেলেন বলেন, ‘মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না।’
কলম্বিয়ার নাগরিক ইসাবেল সুয়োরাজ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢোকে ছাত্রদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। তখন বিদ্যালয়ের মাঠে মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকা চলছিল। ইসাবেল সুয়োরাজ বলেন, এই আয়োজন তাঁকে শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিল।
কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছিলেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক এম এন সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষক বদর আলম, সৈয়দ আহমদসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক এম এম সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় বিদেশিদের নিয়ে মহান একুশের এই আয়োজন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে কক্সবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্ররা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন বলেন, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়ের মাঠে জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। একই সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথম ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন।
কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সংগঠক শেখ আশিকুজ্জামান বলেন, ভৌগোলিকসহ নানা দিক থেকে কক্সবাজার এখন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির প্রতিষ্ঠার কারণে এখানে কয়েক হাজার বিদেশি নাগরিক অবস্থান করেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আনন্দ অনেক এবং যথার্থ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ঙ গণ ন বল ন আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ।
আগামী ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট এই কর্মসূচিগুলো অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনে থাকছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিপ্লবী নাটক, গান, কবিতা, আলোচনা সভা ও বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। কর্মসূচির সূচনা হবে ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর ৫টায় প্রতীকী সাইকেল র্যালির মাধ্যমে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গণভবন পর্যন্ত যাবে।
আরো পড়ুন:
মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপকে চলছে বেরোবি
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
সকাল ৯টায় টিএসসিতে থাকবে সাধারণ নাস্তার আয়োজন। এর পরপরই প্রদর্শিত হবে ‘জুলাই বিপ্লব’ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে বিপ্লবী গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে । সকাল ১০টা থেকে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মুখে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা শোনার আয়োজন থাকবে।
দুপুর ২টায় একটি মাইম পরিবেশনা ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা ও সাড়ে ৫টায় পরপর আরো দুটি নাটক প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে গণআন্দোলনে নিহতদের উত্তরাধিকার ও আত্মিক উপস্থিতিকে ঘিরে আলাপ-প্রতিআলাপের একটি রূপক পরিসর গড়ে উঠবে ।
৬ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতেই থাকবে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলোচনা সভা। সকাল ১০টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের ১ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন’ বিষয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলাম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পর্দা নামবে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির।
কর্মসূচির তৃতীয় দিন ৭ আগস্ট দিনব্যাপী চলবে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সেখানে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট নানা দলিল, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণজাগরণ ও ছাত্র প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। সেই ঘটনার স্মরণে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণের প্রয়াসে ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা আয়োজন করতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।”
তিনি বলেন, “এ আয়োজন হবে শিল্প, সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার এক সংমিশ্রণ। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সেই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী