খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ৬২ কেজি মাংস উদ্ধার করেছেন কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। আজ শনিবার ভোরের দিকে কয়রা উপজেলার ঘড়িলাল গ্রামসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব মাংস উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, মাংস ফেলে পালিয়ে যায় চোরা শিকারিরা।

ঘড়িলাল গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গ্রামের পাশের একটি ছোট নদী পেরোলেই সুন্দরবনের গহিন জঙ্গল। হরিণশিকারিরা ছদ্মবেশে বনে ঢুকে নাইলনের দড়ি দিয়ে একধরনের ফাঁদ বানিয়ে হরিণের যাতায়াতের পথে রাখে। চলাচলের সময় প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। এরপর বনের ভেতর থেকেই মাংস কেটে লোকালয়ে এনে তা বিক্রি করা হয়।

বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কপোতাক্ষ নদ ধরে কয়রার ঘড়িলাল গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছে ভোরের আবছা আলোয় একটি নৌকা দেখতে পাই। এতে বসে দুজন বইঠা বাইছিল। আমাদের ট্রলারটি ওই নৌকার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই তাঁরা কপোতাক্ষ নদে ঝাঁপিয়ে পালিয়ে যান। পরে পরিত্যক্ত নৌকাটি তল্লাশি করে ভেতরের একটি পাত্রে বরফ দেওয়া অবস্থায় ৬২ কেজি হরিণের মাংস পেয়েছি।’

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রায় ৩০টির বেশি চোরা শিকারি চক্র ফাঁদ পেতে হরিণ নিধন করে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু কয়রা থেকে ২০৪ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবনের ছেড়ারখাল এলাকা থেকে ৯০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেন সুন্দরবনের খাঁশিটানা বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা।

এসব চোরা শিকার বন্ধে বন বিভাগের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বন্য প্রাণী শিকারে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্যদাতাকে পুরস্কার দিচ্ছি। এতে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমেছে। আজ জব্দ করা হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ