১০ থেকে ৩৭ বার দুবাই গমন, আছে স্বর্ণবাড়ি
Published: 22nd, February 2025 GMT
দুবাই গেছেন ১০, ২২, ২৬ এবং ৩৭ বার। কারও আছে সোনায় মোড়ানো সাততলা বাড়ি। এলাকার লোকজন বলে ‘গোল্ডেন (স্বর্ণ) বাড়ি’। কারও বাড়ি দশতলা। কারও বাড়ি পাঁচতলা। হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা এমন তিন স্বর্ণ চোরাকারবারির খোঁজ পেয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সঙ্গে তাদের সহযোগীদের তথ্যও পাওয়া গেছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার বিপরীতে একটি বাড়ির মালিক মো.
নগরের মধ্যম রামপুরা বৌবাজারে আট গণ্ডা জমির ওপর ১০ তলা বাড়ি তৈরি করছেন দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি চারদিক থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কর্মচারী রাজ্জাক বলেন, এ বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। এটি ছাড়াও রামপুরা আবাসিকে জাহাঙ্গীর ভবন নামে তাদের পাঁচতলা আরেকটি ভবন রয়েছে। সেটির বাজারমূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা।
সিআইডি কর্মকর্তা সুমন সাহা বলেন, ‘সাইফুদ্দিনের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তার দুই ভাই মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। দুবাই ও ওমান থেকে স্বর্ণবার চোরাচালান করে সে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। বায়েজিদে এক আবাসিকে তার দুটি গোল্ডেন বাড়ি রয়েছে।’
সুমন সাহা আরও বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানের অন্য একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দুই মাফিয়ার খোঁজ পেয়েছি। তারা রিয়াজউদ্দিন বাজারে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণবার চোরাচালান করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত নই। মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যবসা করে সম্পদের মালিক হয়েছি। ষড়যন্ত্র করে আমাদের দুই ভাইকে চোরাচালানকারী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বহুবার দুবাই আসা-যাওয়া করতে হয়েছে।’ আরেক অভিযুক্ত মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘কী ব্যবসা করেছি, তা আপনাকে বলতে হবে কেন? স্বর্ণ চোরাচালান করিনি।’
প্রকাশ্যে ব্যবসা, আড়ালে চোরাচালান
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্যারামাউন্ট সিটি মার্কেটের চতুর্থ তলায় সানজিদা ইলেকট্রনিক্স। এখানে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ব্যবসার আড়ালে জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর করেন স্বর্ণবার চোরাচালান। দুবাই ও চট্টগ্রামে দুই ভাই গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। দুবাইয়ে তাদের কসমেটিক্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, জাহাঙ্গীর ও সায়েমগীর বছরের বেশির ভাগ সময় দুবাই থাকায় এটি পরিচালনা করতেন আরেক ভাই মোবারক আজম। একই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা পাচার ও চোরাচালান করা হতো। দুই ভাইয়ের সিন্ডিকেটে আছেন পেশাদার স্বর্ণ চোরাচালানকারী মিজানুর রহমান, সোহেল ও হাসেম।
প্যারামাউন্ট সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নওশাদ আলম বলেন, ‘মার্কেটের ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের চিনতাম। ৭-৮ বছর ধরে ব্যবসা করলেও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত, তা জানতাম না। সিআইডি থেকে বিষয়টি শুনেছি।’
তারা ওড়েন আকাশে
জাহাঙ্গীর তিন বছরে দুবাই-বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন ২৬ বার। এ হিসাবে তিন বছরে ১০ লাখ টাকার উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়েছেন তিনি। সায়েমগীর তিন বছরে আসা-যাওয়া করেছেন ১০ বার। বিমান ভাড়া ব্যয় করেছেন ৪ লাখ টাকা। তাদের সিন্ডিকেটের সদস্য মিজানুর রহমান তিন বছরে ২২ বার এবং সোহেল পাঁচ বছরে ৩৭ বার দুবাই-বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেছেন। প্রতিবার তারা দুবাই থেকে দেশে আসার সময় স্বর্ণবার নিয়ে এসেছেন বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।
২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর ২ কোটি ৯১ লাখ ১৩ হাজার টাকার ২৬ পিস স্বর্ণবার, ৩ পিস স্বর্ণপিণ্ড, ৬ পিস স্বর্ণপাতসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে দুবাই থেকে দেশে আসেন সোহেল। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পার হওয়ার সময় ধরা পড়েন।
ধনী হতে স্বর্ণ চোরাচালান শুরু করেন সাইফুদ্দিন
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. সাইফুদ্দিনের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। রাতারাতি ধনী হতে স্বর্ণবার চোরাচালানের পথ বেছে নেন। ২০১৭ সালে কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার ৬০ পিস স্বর্ণবার জব্দ করা হয়। সাইফুদ্দিন রাউজানের গহিরা দলই নগরের মৃত ইদ্রিস সওদাগরের ছেলে ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বর ণ চ র চ ল ন চ র চ ল ন কর স স বর ণ প স স বর ত ন বছর কর ছ ন ব যবস তদন ত স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।