‘ভালোবাসি বাংলা ভাষা’বিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠানে শিশু–কিশোরদের রং–তুলিতে ফুটে উঠল বাংলার রূপ। কত সুন্দর করে বাংলা বর্ণ লেখা যায়, সেই প্রতিযোগিতায়ও মেতে ওঠে ওরা। তাদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হলো প্রিয় জন্মভূমির বন্দনা। বাংলার জাদু, রোবট শোতেও মাতোয়ারা হয়েছে এই শিশু–কিশোরেরা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘ভালোবাসি বাংলা ভাষা’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে এমন বৈচিত্র্যময় আয়োজন ছিল। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন নানা আয়োজনে বাংলা ভাষা ও বাংলার রূপ–রং–সুরে মেতেছিল শিশু–কিশোর, অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা।

ঢাকার মাদানী অ্যাভিনিউর শেফস টেবিল কোর্ট সাইডে প্রথমা বুক ক্যাফেতে এই অনুষ্ঠান হয়। শেফস টেবিলের সহযোগিতায় এর আয়োজন করে প্রথমা বুক ক্যাফে শিশু-কিশোর কর্নার (কিডস জোন)।

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বেলা দুইটায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ঘৃণা থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি হয় না, ধ্বংস হয়। পৃথিবী থেকে যা কিছু সৃষ্টি হয়, সবকিছুই হয় ভালোবাসা থেকে। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাসৈনিকেরা নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বাংলা ভাষার প্রতি ঋণী, কৃতজ্ঞ। এই ঋণ আমাদের কোনো দিন শেষ হবে না।’ নিজের ভাষাকে ভালো করে জানলে অন্য ভাষাও খুব সহজে আয়ত্ত করা যায়, বলেন এই জাদুশিল্পী।

উদ্বোধনের পর ৩৫ জনের বেশি শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যখন তারা অঙ্কনে ব্যস্ত, তখন আকাশ মেঘলা, হালকা বাতাসও বইছিল। এক মনোরম, উপভোগ্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অবশ্য এক পর্যায়ে বৃষ্টি শুরু হয়, তাতে প্রতিযোগিতায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও তা চলমান থাকে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় শিশু–কিশোরদের হাতের লেখা প্রতিযোগিতা। এই দুই প্রতিযোগিতায় মোট ১২ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন।

‘ভালোবাসি বাংলা ভাষা’ শীর্ষক আয়োজনে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য: মাহমুদুর রহমান মান্না

‘এরা সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। অর্থনীতিতে নেই, পুলিশের কোনো সংস্কার হচ্ছে না, শিক্ষায় নেই, কোথাও নেই। তাহলে এই সংস্কারটা কী?’ এ প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে মান্না বলেছেন, ‘টাস্কফোর্স আছে, কিন্তু তার কোনো মূল্য নেই। পুলিশ বা প্রশাসনে কী সংস্কার হচ্ছে, সেটাও জানানো হচ্ছে না। কোনো কমিটি পর্যন্ত নেই। তাই প্রশ্ন জাগে, এই কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য?’

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন মান্না। ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।

আলোচনায় বাজেট নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য নিরসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। বাজেট না হয়ে এটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে এমন কোনো কথা হয়েছে কি না, যেটা বাইরে বলা যাবে না, সেই প্রশ্ন করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। এরপরও নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মান্না।

নির্বাচন ছাড়া যাওয়ার কোনো পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি হঠাৎ কিছু ঘটিয়ে দেয়, সেটা বলা যায় না। কিন্তু আমরা তো জানি, সেই ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নাই। সেই অর্থে মাইনাস নির্বাচন-এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচন ইস্যুতে বরফ জমে ছিল, এখন সেটি গলতে শুরু করেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল ওই তারিখে নির্বাচন হতে পারবে না। সরকার বলেছিল একমাত্র ওই দল বিরোধিতা করছে। এখন যেভাবে কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে বরফ গলছে। আমি এটা ইতিবাচক মনে করি। আমি গণতন্ত্র চাই, সেই জন্যই নির্বাচনের ওপর এত জোর দিচ্ছি।’

পাচার করা অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ঘাটতি দেখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর যেখানেই যাই কেউ তো আমাদের ফেরত দিচ্ছে না। সবাই আমাদের ডাকছে আসো, তোমাদের কী লাগে সংস্কারের জন্য, কী করতে হবে, দেশটা বদলাবার জন্য কী করতে হবে, একদম সর্বোচ্চ জায়গা থেকে বলা হয়েছে। অথচ দেখলেন এই পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনবার জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার) কী আচরণ করলেন। উনি ঠিক করেছেন নাকি আমরা কোনো কথাবার্তা না বলে গেছি?’

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে লিখিত বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাসার হাওলাদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ