ঝিনাইদহে জাসদ গণবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
Published: 23rd, February 2025 GMT
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনী হত্যাকাণ্ড ও সারা দেশে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘বামপন্থী সন্ত্রাসবাদ, নিপাত যাক নিপাত যাক’, ‘লাল সন্ত্রাসের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘বামপন্থী জঙ্গিরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘রেড কার্ড রেড কার্ড, লাল সন্ত্রাসকে রেড কার্ড’, ‘লাল সন্ত্রাসীরা মানুষ মারে, ইন্টেরিম কি করে’, ‘লাল সন্ত্রাসের আস্তানা, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় নগর ও অঞ্চল বিভাগের শিক্ষার্থী সুয়াইব হাসান বলেন, “উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদী লাল সন্ত্রাসীদের হাতে তিনজন মানুষ নির্মমভাবে খুন হয়েছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর এ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ আমরা কোন লাল সন্ত্রাসের হাতে তুলে দিতে পারি না। বরং এ সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে।”
তিনি বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় শিক্ষার্থীরা লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা দিচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে তাদের কোন ভূমিকা আছে কিনা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সেটা তদন্ত করে দেখে। জাহাঙ্গীরনগরে এ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
শাখা শিবিরের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ হাসান বলেন, “বর্তমানে আইন- শৃঙ্খলার অবনতি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। ধর্ষণ, গুম-খুন বেড়েই চলছে। ঝিনাইদহে জাসদ নেতাদের তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা কেবল একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এটি আদর্শিক জায়গা থেকে সন্ত্রাসবাদ কায়েমের প্রচেষ্টা, যা তারা চীন, কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে ঘটিয়েছে। সুতরাং ইন্টেরিম সরকারকে বলব, দেশের স্বার্থে এ লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “ঝিনাইদহে সন্ত্রাসী সংগঠন জাসদ গণবাহিনী কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর তারা আবার দায় স্বীকার করে অনলাইনে প্রকাশ করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। আমরা সংস্কার চাই, কিন্তু তার আগে চাই জীবনের নিরাপত্তা। অতিসত্বর আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি না হলে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হব।”
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাঠে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু। পরে দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে তা প্রচার করেন তিনি।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী