মুরগি আর গরুর খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বড়াল নদীতে। এর সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার আবর্জনা ফেলায় দূষণের পাশাপাশি ভরাট হচ্ছে নদী। সমানতালে চলছে পার দখল। এভাবে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এক সময় প্রমত্ত বড়াল। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে গেছে। নদীর বুকজুড়ে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। পার দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা।
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া বড়াল মিশেছে যমুনায়। এর মধ্যে চাটমোহর এলাকায় বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে নদীটি। ২০০৮ সালে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণসংযোগের কারণে সরকার ক্রসবাঁধ অপসারণ করে। তুলে দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। নানান জরিপ, পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনসহ নানা প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়। এর পরও নদীতে প্রাণ ফেরেনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর অনেক স্থান ভরাট হয়ে একাধিক সরু খালে পরিণত হয়েছে। পানি কালচে রং ধারণ করেছে। অনেক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। নদীর অধিকাংশ স্থানেই এখন পানি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, নদী দখল আর দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রতিবাদে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বড়াল রক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিল। এর পরও নদী অবমুক্ত কিংবা খননকাজ করার জন্য আজও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কবে উদ্যোগ নেওয়া হবে, তাও কেউ জানেন না। দখল আর দূষণ রোধে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এভাবে চলতে থাকলে নদী অস্তিত্ব হারাবে বলে মনে করছেন তারা।
বড়াল নিয়মিত দখল আর দূষণ করা হচ্ছে জানিয়ে এলাকার লোকজন বলেন, পানি থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। এ দুর্ভোগ থেকে সহসা মুক্তিও মিলছে না। এরই মধ্যে নদীপারে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। বড়াল রক্ষায় গড়ে ওঠা কমিটি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। মাঝেমধ্যে দু-একটা সভায় আন্দোলন জোরদার করার কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন।
বড়াল পারের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও সুজা উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, নদীতে দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কঠিন। গরু-মুরগির খামারের বর্জ্য এবং পৌরসভা, হাসপাতাল, হাট-বাজারের আবর্জনায় ফেলা হয় বড়ালে। তাদের অভিযোগ, নদী দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা নানা কারণে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী। এরই মধ্যে চাটমোহর নতুন বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ী নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও পাউবোর পরিচালনা পরিষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে নদী দখল করে বাড়ি নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইতোপূর্বে একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, পরিমাপ করে নিজস্ব জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন। নদীর জায়গা দখল করা হয়নি। অভিযোগ সত্য নয়।
বড়াল নদী দখল আর দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, দূষণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর র সদস য কম ট র এল ক য় ন কম ট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।