সারাদেশে নারীর উপর ধর্ষণ, সহিংসতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে তারা এ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা সাত দফা দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো- সকল ধর্ষণ, শারীরিক হেনস্থা ও সামাজিক লাঞ্চনার বিচার; নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা করতে হবে; ইন্টেরিমের জবাবদিহিতা করতে হবে; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ করতে হবে; ধর্ষণ আইনে ধর্ষকের জামিন বাতিল; মব থেকে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা; আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অকার্যকারতা নির্মূল করে দেশে চলমান নৈরাজ্যের অবসান করতে হবে।

আরো পড়ুন:

যৌন হেনস্তা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক বরখাস্ত

ক্রিকেট খেলা নিয়ে রাবিতে সংঘর্ষ, শিক্ষকসহ আহত ২০

সমাবেশে তারা ‘নারীর নয় সমাজের পোশাক বদলাও’, ‘ধর্ষকের নাম-ধাম প্রকাশ কর লজ্জা দাও’, ‘বোধ নয় বোধ জাগ্রত করুন’, ‘ব্যবস্থা নে হারামজাদা নইলে সংস্কার চিবিয়ে খাবো’, ‘ইন্টেরিম বিচার চাই’, ‘সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণবিরোধী সেল কার্যকর কর’, ‘ধর্ষকের জামিন ক্যানো?’ ইত্যাদি লেখা প্লে-কার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোনালিসা মুজিব মিম বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। এ রকম ঘটনা বারবার হওয়ার কারণ, আমাদের দেশে ধর্ষণের দৃষ্টান্ত কোন শাস্তি নেই।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যদি এমন কোন শাস্তি থাকতো, যেটা মানুষের মধ্যে নাড়া দিত, তখন একটা মানুষ ধর্ষণ করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবত। যদি শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড বা যৌনাঙ্গ কর্তন করার বিধান থাকলে কেউ ধর্ষক হওয়ার সাহস পেত না।”

শিক্ষার্থী সৌমিত কুমার বলেন, “দেশের মানুষ এখন এমন হয়ে গেছে যে, চোখের সামনে বা বাসের পিছনে সিটে ধর্ষণ হলেও আমরা ভয়ে কিছু বলি না। একটা নারী, যে আমাদের মা বা বোন হতে পারে, তাকে ধর্ষণ বা লাঞ্ছনা করার হলে মানুষ হিসেবে তার প্রতিবাদ জানানো অবশ্যই আমাদের উচিত। সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের সরকার বা প্রশাসন এ বিষয় নিয়ে আগ্রহী না।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ

বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।

শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।

পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ

এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।

অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ