ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার কারখানা করতে যাচ্ছেন—এই জল্পনা এখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে–বাতাসে; যদিও শুল্কের বিষয়টি রয়েই গেছে এবং সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পও তেমন একটা খুশি নন। ভারতের বাজারে টেসলার দাম কেমন পড়বে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে টেসলা নিয়ে এলে আমদানি শুল্কে ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন মাস্ক। তারপরও বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, তারপরও পরিবেশবান্ধব ওই মার্কিন গাড়ির দাম পড়বে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ রুপি। ফলে মধ্যবিত্তের মধ্যে কতজন মাস্কের গাড়ি কিনতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টেসলার সবচেয়ে সস্তা তিন নম্বর মডেলটির কারখানা পর্যায়ের দাম ৩৫ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ দশমিক ৪ লাখ রুপি। মাস্কের এই পরিবেশবান্ধব গাড়িটির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর সঙ্গে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত খরচ আছে, যেমন রাস্তার কর ও বিমা। ফলে সবকিছু যোগ-বিয়োগ করে টেসলার সবচেয়ে সস্তা মডেলটির দাম দাঁড়াবে আনুমানিক ৪০ হাজার ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩৫ থেকে ৪০ লাখ রুপি।

ভারতের বাজারে অন্যান্য কোম্পানির বেশ কিছু বৈদ্যুতিক গাড়ি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা কমেছে। মাহিন্দ্রার এসইভি ৯ই, হুন্ডাইয়ের ই-ক্রেটা ও মারুজি সুজ়ুকির ই-ভিটার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির মডেলগুলোর তুলনায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হবে টেসলার গাড়ির দাম। ফলে মাস্কের ব্যাটারিচালিত গাড়ি ভারতের বাজারে এলে এসব কোম্পানির মার খাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

টেসলাকে নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছে মূল্যায়ন সংস্থা সিএলএসএ। সেখান বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারিচালিত গাড়ির বিক্রি এখনো চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তুলনায় অনেকটাই কম। গত বছর ভারতের বাজারে মোট যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৪৩ লাখ। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৯ হাজার ১৬৫টি।

ভারতীয়রা পেট্রল, ডিজেল বা হাইব্রিড মডেলের যাত্রীবাহী গাড়ি বেশি পছন্দ করেন। মাস্কের গাড়ি দ্রুত ক্রেতাদের মন জয় করতে পারবে—এমনটা নয়, দামের কারণেই নয়। এর চাহিদা সম্ভবত সমাজের উচ্চ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ইকোনমিক টাইমসের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইতে ব্যাটারিচালিত গাড়ি নিয়ে হাজির হবে টেসলা। ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগ শুরু করেছেন মাস্ক। ১৮ ফেব্রুয়ারি বহুজাতিক এই কোম্পানি লিঙ্কডইনে একটি চাকরির তালিকা পোস্ট করে। সেখানে মুম্বাই মেট্রোপলিটন এলাকার কনজ্যুমার এনগেজমেন্ট ম্যানেজার পদে নিয়োগের কথা বলা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও