টাঙ্গাইলের ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত ১০ দিনে এই সড়কে ঘটেছে তিনটি ডাকাতির ঘটনা। রাত নামলেই এই সড়কে নেমে আসে ডাকাত আতঙ্ক। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এই সড়ক ব্যবহারকারীরা। সর্বশেষ স্কুল শিক্ষার্থীদের পিকনিকের চারটি গাড়িতেও ডাকাতি সংঘটিত হলো!

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এই সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়ে শিক্ষা সফরগামী চারটি স্কুলবাস। ডাকাতরা লুট করে নিয়ে যায় সর্বস্ব।

ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে সাগরদীঘি পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার। উপজেলার পূর্বাঞ্চল একটি পাহাড়ী জনপদ। সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ। আশির্বাদের এই সড়ক বর্তমানে রূপ নিয়েছে অভিশাপে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। 

গত ১০ দিনে সড়কের একইস্থানে দুইবারসহ তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতের দল লুট করে নিয়ে যায় চালকসহ যাত্রীদের সর্বস্ব। শুধু লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি, মারধরের শিকার হয় চালক ও যাত্রীরা। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন। 

ময়মনসিংহ বিভাগের ফুলবাড়িয়া উপজেলাার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘাটাইলের প্রায় সীমানা সংলগ্ন। মঙ্গলবার ভোরে চারটি বাস নিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষা সফরের জন্য রওনা দেন নাটোরের গ্রীনভ্যালি পার্কের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে চারটার দিকে বাস চারটি ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছলে ডাকাত দলের কবলে পড়ে। সামনের বাসে ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। 

তিনি জানান, রাতেরবেলা বাস চলছে দ্রুত গতিতে। হঠাৎ তিনিসহ অন্যরা খেয়াল করেন সড়কের মাঝ বরাবর গাছের গুঁড়ি। তিনি বুঝে ফেলেন এই কাজ ডাকাতদের। সতর্ক করেন সবাইকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির জানালা এবং গেইট। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০/১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে গাড়িতে। ডাকাতরা পেছনের গাড়ি থেকে তাদের মালামাল লুট করা শুরু করে। এরই মধ্যে তিনি ফোন করেন ৯৯৯ নম্বরে। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে তিনটি গাড়ির যাত্রীদের থেকে মালামাল লুট করা শেষ। 

খলিলুর রহমান বলেন, “ডাকাতরা নগদ টাকা নিয়ে গেছে দেড় লাখ। স্বর্ণ দেড় ভরি। স্মার্টফোন ১০টা। এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন (২৫) ও অভিাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার (৩৯)।”

সাখাওয়াত হোসাইন রবিন বলেন, “আমি ছিলাম দুই নম্বর গাড়িতে। ওই গাড়িতে ছাত্রীরা ছিল। ডাকাতরা আমার কাছ থেকে মোবাইল নেওয়ার পর যখন ছাত্রীদের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দেই। এর ফলে তারা আমাকে দায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে।”

ডাকাতদের অস্ত্র এবং ভয়ঙ্কর রূপ দেখে গাড়িতে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম (৫২)। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার জানায়, ভয়ে সে অনেক কেঁদেছে। এখনো তার ভয় দূর হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, “মাঝে মধ্যেই লক্ষণের বাধা ওইস্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত বুধবারও একইস্থানে ডাকাতি হয়।”

মালিরচালা গ্রামের লিটন ভূইয়া বলেন, “সড়কে গাছ ফেলে একই কায়দায় বুধবারের ডাকাতির ঘটনায় মোটরসাইকেল ও কাঁচা মালের ট্রাক আটক করে তাদের থেকে সব লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।”

এর আগে একই সড়কে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির কবলে পড়েছিল ১০ টি ট্রাক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল। ডাকাতরা চালকদের থেকে নগদ টাকাসহ স্মার্টফোন লুট করে নিয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন। চালকদের মারধরও করা হয়। 

গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক মাসে ঘাটাইলে পাঁচটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বাড়িগুলো থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। 

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, “মঙ্গলবার ভোরে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে গাছ ফেলে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে চারটি স্কুলবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি ৭টি মোবাইল ও দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে ডাকাতরা। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।”

ঢাকা/কাওছার/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক ত র ঘটন ল ল ট কর স গরদ ঘ উপজ ল সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ