Samakal:
2025-11-03@05:34:27 GMT

রমজানে কোরআন অধ্যয়ন

Published: 27th, February 2025 GMT

রমজানে কোরআন অধ্যয়ন

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র কোরআন একবারে নাজিল হয়। সেখান থেকে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল কোরআনই নয়, বরং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ সব ঐশীগ্রন্থ রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানি বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে (সহি আল-জামে)।

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। প্রতিবছর রমজান মাসে হজরত জিব্রাইল (আ.

) মহানবী (সা.)কে পূর্ণ কোরআন পড়ে শোনাতেন এবং মহানবী (সা.)ও তাঁকে পূর্ণ কোরআন পড়ে শোনাতেন। জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু’বার পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। 
পবিত্র কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ব্যতীত প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিভাবে পবিত্র কোরআন শিক্ষা করা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন। যে ব্যক্তি যত বেশি কোরআনের ধারক-বাহক হবেন, তাঁর সম্মান তত বেশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান ভূমি।’ 

কোরআন মজিদ দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালার আদালতে মহানবী (সা.) অভিযোগ করবেন। তিনি বলবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৩০)।’
কোরআন শিক্ষা করা ফরজ; শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ হয়; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন সহি ও শুদ্ধভাবে শেখা ও তেলাওয়াত করা জরুরি। যারা পড়তে জানেন না, তাদের শিখতে হবে। যারা শিখে ভুলে গেছেন, তাদের পুনরায় পড়তে হবে। যারা ভুল পড়েন, তাদের সহিভাবে পড়া শিখতে হবে।
রমজান মাস ব্যতীত বছরের ১১ মাসে কোরআন তেলাওয়াতে ১টি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি; আর পবিত্র কোরআন নাজিলের মাসে রমজানুল মোবারকে ১টি হরফ তেলাওয়াতের বদলে ৭০ নেকি পাওয়া যায়। রমজানুল মোবারক হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সুপার অফার। যে যত বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবে, সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। তাই সহি ও শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে আমরা আরও বেশি মনোযোগী হবো ইনশাআল্লাহ।

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো কোম্পানি বিশেষ পণ্যের অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করে এর সময় বেঁধে দিয়ে। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষ অফার দিয়েছেন। তা হলো রমজানুল মোবারক। রমজান মাসেই রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
উল্লেখ্য, পূর্বেকার নবী-রাসুল (আ.)-এর উম্মতরা দীর্ঘ হায়াত পেতেন। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদী সাধারণত ৭০-৮০ বছর হায়াত পান। উম্মতে মুহাম্মদীর আয়ু যেহেতু খুবই স্বল্প, তাই মহান আল্লাহ দয়া করে তাদের জন্য কোরআন নাজিলের এ মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর উপহার ‍দিয়েছেন। যে রাতের একটি নেক আমল হাজারটি নেক আমলের চেয়ে উত্তম। তাই আমরা যদি স্বাভাবিক ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হায়াতে জিন্দেগিতে পাওয়া সব রমজান মাসে এবং কদরের রাতে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন– কোরআন তেলাওয়াত, জিকির- আসকার, কবর জিয়ারত ও দান- খয়রাত বেশি বেশি করতে পারি, তাহলে অল্প আয়ুতেও অনেক বেশি নেকি অর্জন করা সম্ভব।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন ম স ক রআন ন র জন য আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ