Samakal:
2025-04-30@23:39:03 GMT

রমজানে কোরআন অধ্যয়ন

Published: 27th, February 2025 GMT

রমজানে কোরআন অধ্যয়ন

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র কোরআন একবারে নাজিল হয়। সেখান থেকে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল কোরআনই নয়, বরং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ সব ঐশীগ্রন্থ রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানি বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে (সহি আল-জামে)।

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। প্রতিবছর রমজান মাসে হজরত জিব্রাইল (আ.

) মহানবী (সা.)কে পূর্ণ কোরআন পড়ে শোনাতেন এবং মহানবী (সা.)ও তাঁকে পূর্ণ কোরআন পড়ে শোনাতেন। জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু’বার পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। 
পবিত্র কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ব্যতীত প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিভাবে পবিত্র কোরআন শিক্ষা করা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন। যে ব্যক্তি যত বেশি কোরআনের ধারক-বাহক হবেন, তাঁর সম্মান তত বেশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান ভূমি।’ 

কোরআন মজিদ দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালার আদালতে মহানবী (সা.) অভিযোগ করবেন। তিনি বলবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৩০)।’
কোরআন শিক্ষা করা ফরজ; শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ হয়; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন সহি ও শুদ্ধভাবে শেখা ও তেলাওয়াত করা জরুরি। যারা পড়তে জানেন না, তাদের শিখতে হবে। যারা শিখে ভুলে গেছেন, তাদের পুনরায় পড়তে হবে। যারা ভুল পড়েন, তাদের সহিভাবে পড়া শিখতে হবে।
রমজান মাস ব্যতীত বছরের ১১ মাসে কোরআন তেলাওয়াতে ১টি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি; আর পবিত্র কোরআন নাজিলের মাসে রমজানুল মোবারকে ১টি হরফ তেলাওয়াতের বদলে ৭০ নেকি পাওয়া যায়। রমজানুল মোবারক হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সুপার অফার। যে যত বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবে, সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। তাই সহি ও শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে আমরা আরও বেশি মনোযোগী হবো ইনশাআল্লাহ।

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো কোম্পানি বিশেষ পণ্যের অফার বা ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করে এর সময় বেঁধে দিয়ে। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষ অফার দিয়েছেন। তা হলো রমজানুল মোবারক। রমজান মাসেই রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
উল্লেখ্য, পূর্বেকার নবী-রাসুল (আ.)-এর উম্মতরা দীর্ঘ হায়াত পেতেন। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদী সাধারণত ৭০-৮০ বছর হায়াত পান। উম্মতে মুহাম্মদীর আয়ু যেহেতু খুবই স্বল্প, তাই মহান আল্লাহ দয়া করে তাদের জন্য কোরআন নাজিলের এ মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর উপহার ‍দিয়েছেন। যে রাতের একটি নেক আমল হাজারটি নেক আমলের চেয়ে উত্তম। তাই আমরা যদি স্বাভাবিক ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হায়াতে জিন্দেগিতে পাওয়া সব রমজান মাসে এবং কদরের রাতে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন– কোরআন তেলাওয়াত, জিকির- আসকার, কবর জিয়ারত ও দান- খয়রাত বেশি বেশি করতে পারি, তাহলে অল্প আয়ুতেও অনেক বেশি নেকি অর্জন করা সম্ভব।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন ম স ক রআন ন র জন য আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ