পনেরো বছর আগে মায়ের দেওয়া এক লাখ টাকায় মাছ চাষ শুরু করেছিলেন রাসেল সরদার। বর্তমানে শতাধিক পুকুর ও ঘের ছাড়াও একটি মৎস্য হ্যাচারি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। এসব প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক যুবককে চাকরি দিয়েছেন রাসেল। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে একাধিক স্বীকৃতি পেয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের এই যুবক। 
মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন রাসেল। তাঁর হ্যাচারিতে পাবদা, সরপুঁটি, ট্যাংরা, শিং, কৈ, গুলশা, পাঙাশ, ভিয়েতনাম কৈ, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ কার্প-জাতীয় মাছের উন্নত মানের রেণু-পোনা উৎপাদন হয়। এসব পোনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী  গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন খামারে বিক্রি করা হয়। মাছ চাষে রাসেলের সাফল্য দেখে এলাকার শিক্ষিত তরুণ-যুবকরা মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 
রাসেল জানালেন, তাঁর হ্যাচারিতে বছরে দুই কোটি রেণু-পোনা উৎপাদন হয়। মাছের নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে গড়ে তুলেছেন পদ্মা ফিড নামে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিদিন ১০ টন উন্নত মানের মাছের খাবার উৎপাদন হয়। এ প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ফিড তাঁর পুকুরের মাছের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে অন্য চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। 
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বরপাইকা গ্রামে রাসেল সরদারের যমুনা মৎস্য হ্যাচারিতে মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। হ্যাচারিতে কর্মরতরা নিজস্ব একাধিক পুকুর থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ (ডিমওয়ালা মাছ) ধরে হ্যাচারির হাউসে রেখে ৫-৬ ঘণ্টা ঝরনা দিয়ে পানি দিচ্ছেন। পরে ইনজেকশনের সাহায্যে এসব মাছে হরমোন দেওয়ার পর পুরুষ মাছের সঙ্গে একই হাউসে রাখা হয়। পরে মা-মাছ ডিম দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হয়। হ্যাচারিতে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা কেজি দরে মাছের রেণু বিক্রি হয়। এ ছাড়া রেণু কিছুটা বড় করে পোনা হিসেবে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন প্রকার মাছের পোনার আকৃতির ওপর দাম নির্ধারণ করা হয়। 
কাঠিরা গ্রামের মৎসচাষি পরেশ বিশ্বাস জানান, তিনি নিজস্ব পুকুরে মাছ চাষের জন্য রাসেল সরদারের হ্যাচারি থেকে বিভিন্ন দেশীয় মাছের রেণু-পোনা ও মাছের খাবার কেনেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার মৎস্য খামারিদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই রাসেলের 
হ্যাচারি থেকে রেণু-পোনা কিনে মাছ চাষ করছেন। তাঁর কারণে এলাকার অনেকেই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। 
রাসেল সরদার বলেন, ২০১০ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে যখন মাছ চাষ শুরু করেন, তখন এলাকার অনেকেই তাঁকে পাগল বলে উপহাস করত। এখন তাঁর শতাধিক পুকুর ও মৎস্য ফিড কারখানায় দেড় শতাধিক লোক কর্মরত আছে। মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনে সফলতার জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেরা মৎস্যচাষি সম্মাননা পেয়েছেন।  
আগৈলঝাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মানিক মল্লিক বলেন, দেশিয় প্রজাতির অনেক মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। রাসেলের হ্যাচারিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছের রেণু-পোনা উৎপাদন করা হয়, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যচাষিদের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠানে অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।  
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, তিনি একাধিকবার রাসেল সরদারের হ্যাচারি পরিদর্শন করেছেন। মাছের রেণু-পোনা ও খাবার উৎপাদনে জেলার মধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান অন্যতম সেরা। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স ল সরদ র এল ক র শত ধ ক মৎস য উপজ ল উৎপ দ র মৎস

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করবেন মির্জা আব্বাস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।

আরো পড়ুন:

যে আসন থেকে লড়বেন তারেক রহমান

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ৩টি আসনে লড়বেন খালেদা জিয়া

এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। সেই নির্বাচন প্রায় ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দিনাজপুর-৩ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকেও লড়বেন তিনি।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ