লক্ষ্মীপুরে যুবদলের কমিটি ঘোষণা, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সংবাদ সম্মেলন
Published: 2nd, March 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দুই কমিটির সদস্যসচিবসহ অনেক নেতা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা কমিটি বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে একাংশ ও রাত আটটার দিকে বিপক্ষে অপর অংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরপর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে দুপক্ষ।
আকবর হোসেনকে রায়পুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও হাবিবুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নুর এ হেলাল ওরফে মামুনকে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ও জাহিদ মোহাম্মদকে সদস্যসচিব করে ২৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান ও পৌর যুবদলের সদস্যসচিব জাহিদ মোহাম্মদের নেতৃত্বে কমিটি বয়কট করে বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা বিগত দিনে ধানের শীষের নির্বাচন না করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আকবর হোসেন ঠিকাদারি করেন। তিনি গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পৌর কমিটির আহ্বায়ক নুর এ হেলাল পৌরসভার চাকরিজীবী। এ ছাড়া কয়েকজন প্রবাসে ছিলেন। এসব ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি ঘোষণার কারণে আমরা বয়কট করেছি। একই সঙ্গে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছি।’
রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আকবর হোসেন ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক নুর এ হেলাল পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তাঁরা বলেন, তাঁদের সম্পর্কে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও দলের জন্য নিবেদিত। ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
গতকাল লক্ষ্মীপুরে যুবদলের ১১টি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশ করা হয়। এসব কমিটির অনুমোদন দেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান ও সদস্যসচিব আবদুল আলিম হুমায়ুন।
কমিটিগুলো হলো লক্ষ্মীপুর পৌরসভা, সদর উপজেলা (পূর্ব), সদর উপজেলা (পশ্চিম), রামগঞ্জ উপজেলা, রামগঞ্জ পৌরসভা, রায়পুর উপজেলা, রায়পুর পৌরসভা, চন্দ্রগঞ্জ থানা, রামগতি উপজেলা, রামগতি পৌরসভা ও কমলনগর উপজেলা।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক একজন সংসদ সদস্য রায়পুর উপজেলায় স্বৈরাচারীভাবে দল চালাচ্ছেন। ব্যক্তিস্বার্থে তিনি দলকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখছেন দীর্ঘ বছর। তাঁর পকেটের ব্যক্তিদের আহ্বায়ক না করায় ঘোলা পানিতে তিনি মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র য বদল র সদস যসচ ব কম ট র প রসভ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।