সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।

আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।

নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র‍্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।

আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন

এছাড়াও পড়ুন:

বাঙালির বাঘ সংস্কৃতি: ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’

বাঘ নিয়ে কত কথাই না বলা যায়! কত কথাই না মনে আসে! যেমন এত বড় প্রাণীটির জন্ম কোথায়, কোথায় বাস করে, কী খায়, কত দিন বাঁচে, কত প্রজাতি, কোন দেশের বাঘ বেশি হিংস্র, কেনই–বা বাঘকে বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় ইত্যাদি।

বাঙালির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ঐতিহ্যের ধারায় বেঙ্গল টাইগার এমন একটি প্রাণী, যা অহংকার, গর্ব, আনন্দ, ভয় আর সম্মানের প্রতীক। বিশাল আকৃতি, শক্তি, হিংস্রতা, রাজকীয় চলাফেরা আর দাম্ভিক আচার-আচরণের কারণে সারা বিশ্বে এই বাঘের আলাদা খ্যাতি রয়েছে।

বলা হয়, সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত বনরক্ষক থাকলেও এ বনের প্রকৃত পাহারাদার বেঙ্গল টাইগার। জানা যায়, লন্ডনের রয়েল পরিবারের একজন দক্ষ শিকারি সুন্দরবনের বাঘ শিকারে বীরত্বের পরিচয় দেন। সেই থেকেই বাংলার বাঘের ঘাড়ে ‘রয়েল’ শব্দটি চেপে বসে।

বাঘ হলো বিড়াল গোত্রের সবচেয়ে বড় প্রাণী। বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়; বরং শক্তি, সাহস ও সম্মানের প্রতীক। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, মিথ ও লেজেন্ডে বাঘের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সুন্দরবনের স্থানীয় জনগণ ও শিকারিরা বাঘকে ‘মামা’ বা ‘বড় মামা’ বলে সম্বোধন করেন। এটা সবার জানা যে মামা-ভাগনের সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর, তাই বাঘকে মামা বলে সম্বোধন করলে সে আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না, এই বিশ্বাস ও ভয় পাওয়ার কারণেই মামা বলে ডাকা হয়।

দেশে বীরত্ব ও শক্তির প্রতীক হিসেবে বাঘকে দেখা হয়। এ দেশে কেউ কোনো সাহসী ভূমিকা রাখলে তাকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে শক্তি, সাহস, উৎসাহ প্রদানের জন্য ‘টাইগার বাহিনী’ নামে ডাকা হয়। আবার দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের লোগো ‘বেঙ্গল টাইগার’।

এ ছাড়া ক্রিকেটকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া ও লেখা হয়। যেমন ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব’, ‘বাঘের গর্জন দেখবে বিশ্ব’, ‘গর্জে ওঠো বিশ্ব’, ‘গর্জনে থাক বিজয়ী অর্জন’, ‘বাঘ দেখে দৌড়ো’ ইত্যাদি।
দেশের বিভিন্ন স্থানের নামে বাঘের প্রভাব চোখে পড়ে। যেমন বাঘমারা, বাঘা বিল, বাঘমারী, বাঘা বাজার, বাঘাবাড়ী, টাইগার পয়েন্ট, রয়্যাল চত্বর ইত্যাদি।

আমাদের সুন্দরবনের অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাণী বাঘ নিয়ে অনেক গান, কবিতা, প্রবাদ রচিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যেমন প্রভাত কুমারীর কবিতা ‘হালুম হালুম হুম! ভেঙেছে মোর ঘুম। বলো তো কী চাই? হরিণছানা চাই’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘মেঘলা দিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে, চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে।’

আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঘ নিয়ে বেশ কয়েকটি গান ও কবিতা লিখেছেন। এ ছাড়া তিনি শৈশবে তাঁর দাদার সঙ্গে বাঘ শিকারে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। জানা যায়, মোগল আমলে বাঘ শিকার করা ছিল আভিজাত্য ও জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সে সময়ে মোগল সম্রাট আকবর শুধু তির-ধনুক নিয়ে শিকারে বের হতেন। তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর সাধারণত হেঁটে শিকারে যেতেন। এ ছাড়া মোগল সম্রাটদের তলোয়ার ও কামানে বাঘের প্রতিরূপ খোদাই লক্ষ করা যায়।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় চলচ্চিত্রেও নামকরণে বাঘের প্রভাব চোখে পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বাংলার বাঘ’, ‘বাঘের থাবা’, ‘বাঘের হুংকার’, ‘বাঘ সিংহের লড়াই’, ‘বাঘবন্দী খেলা’, ‘বাঘে মহিষে লড়াই’, ‘টাইগার: দ্য বস’। এ ছাড়া ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার প্রচারের জন্য পাপেট বাঘ ব্যবহার করা হয়েছে।

হিন্দি সিনেমা রয়েছে ‘এক থা টাইগার’, ‘দ্য টাইগার’, ‘টাইগার নাম্বার ওয়ান’ ইত্যাদি। বাংলা নাটকের নামেও বাঘের প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন ‘বাঘ’, ‘বাইরে বাঘ ঘরে বিড়াল’, ‘বাঘ যখন বিড়াল’, ‘দিনে বাঘ রাতে বিড়াল’, ‘বাঘ বন্দি বিড়াল’, ‘নীল কমলের বাঘ’, ‘বাঘের শিন্নি’, ‘নিজের এলাকায় সবাই বাঘ’, ‘বাঘ না বাঘিনী’ ইত্যাদি।

অনেক প্রবাদ–প্রবচনে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন ‘বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা’, ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’, ‘কাল হয়েছে অকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল’, ‘আগে গেলে বাঘে খায়/ পরে গেলে সোনা পায়’, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়’, ‘যে বনে যায়, সেই বাঘ হয়’, ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’ ইত্যাদি।

এ ছাড়া বিভিন্ন সিনেমায় বাঘের সঙ্গে তুলনা করে গানের উপস্থিতি চোখে পড়ে। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’ ‘পায়ে পড়ি বাঘ মামা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আবার ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমায় ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’ গানটির শিল্পী হলেন আজাদ রহমান। জনপ্রিয় গানটিতে সুরও করেছেন তিনি। ‘আমীর ফকির’ সিনেমার গান ‘বাঘ শিকার যাইমু/বন্দুক লইয়া রেডি হইলাম আমি আর মামু! মামু আমার বেজায় রসিক কেন করে খামু খামু’ একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল।

এদিকে ‘গ্রেপ্তার’ ছবির গান ‘আগে গেলে বাঘে খাবে’, ‘হাবিলদার’ সিনেমায় কুমার বিশ্বজিৎ গেয়েছেন ‘তুমি বাঘের মুখে পড়েছ, ছাড়া পাবে না, ও তুমি মরেছ!’ এ ছাড়া ‘বাংলার বাঘ তুমি, বাংলার অহংকার, তোমাতে গর্জন, তোমাতে হুংকার’ গানটি মূলত মাশরাফি বিন মুর্তজাকে উৎসর্গ করে লেখা। পাশাপাশি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নকুল বিশ্বাসের ‘আমি বাঘ তুই হরিণের পোলা’ গানটি পৃথিবীর সব সংখ্যালঘু, নির্যাতিত, দুর্বল মানুষের জন্য লেখা।

অনেক প্রবাদ–প্রবচনে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন ‘বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা’, ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’, ‘কাল হয়েছে অকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল’, ‘আগে গেলে বাঘে খায়/ পরে গেলে সোনা পায়’, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়’, ‘যে বনে যায়, সেই বাঘ হয়’, ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’ ইত্যাদি।

আবার মানুষও তার সাহসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাঘ হয়ে উঠতে পারে। যেমন বাঘের মতো সাহসী ও সুঠামদেহী সুপুরুষ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে বলা হতো বাংলার বাঘ। আবার বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। খেলাধুলায় বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়। যেমন গ্রামীণ জীবনে বাঘবন্দী খেলা, বাঘ-ছাগল খেলা চোখে পড়ে।

পরিবেশবিদদের মতে, বাঘ সারা বিশ্বে একটি বিপন্ন প্রাণী। তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ রয়েছে। এদের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ক্রমে কমছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।

জানা যায়, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালের জরিপে ৪২৫টি এবং ১৯৮৪ সালে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানা যায়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। ২০১৮ সালের সর্বশেষ বাঘশুমারিতে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালের জরিপে পাওয়া গেছে ১২৫টি।

বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিশালতা, নদ-নদীর পর্যাপ্ততা, বনের গভীরতা, শিকারের সহজলভ্যতা বাঘ বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। সে কারণে একক বন হিসেবে সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাঘ বাস করে। আগে এ বনে বাঘের সংখ্যা অত্যধিক ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা কমে আসছে।

ইউএনডিপির হিসাবমতে, সুন্দরবন থেকে বছরে অন্তত ২০টি করে বাঘ কমে যাচ্ছে। অন্য এক হিসাবমতে, প্রতিবছর গড়ে ৮-১০টি বাঘ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বাঘের মৃত্যুর জন্য ৮টি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। যথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা-লবণাক্ততা, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বনের ঘনত্ব কমে যাওয়া, খাদ্যসংকট, বার্ধক্যজনিত, পুরুষ বাঘ কর্তৃক বাচ্চা খেয়ে ফেলা, ফাঁদ পেতে ও খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা, লোকালয়ে প্রবেশের পর গ্রামবাসী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঘের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। এক জরিপে দেখা যায়, গণপিটুনি, রোগে ভুগে এবং বিভিন্ন কারণে গত দুই যুগে ৬০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

আর ১৯৮৩-২০০৩ সময়ে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন কারণে ৫৫টি বাঘ মারা যায়। তবে বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন এবং তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন কারণে ১৬টি বাঘ মারা গেছে।

বাঘ সুন্দরবনের প্রতিবেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সুরক্ষা বনের প্রতিবেশকে সুরক্ষিত করে। দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেলে স্বাভাবিকভাবেই হরিণসহ অন্য প্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। ফলে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। বাঘকে সুন্দরবনের বনজ সম্পদসহ অন্যান্য প্রাণীকুলকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। বনের অভিভাবক হিসেবে বাঘের সংরক্ষণ প্রয়োজন, যা পরিবেশ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও মানবজীবনযাত্রাকে রক্ষা করবে। তাহলে বাঁচবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ তথা দেশ।

খ ম রেজাউল করিম সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহামারি, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ, সভ্যতার তিন শত্রুকে ঠেকাব কী করে
  • তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক: শারমিন আহমদ
  • মাদকাসক্ত ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা, থানায় আত্মসমর্পণ বাবা-মায়ের
  • ‘মাদকাসক্ত’ ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার পর থানায় আত্মসমর্পণ মা-বাবার
  • বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের চারপাশে হবে সুরক্ষাবলয়: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টার 
  • বাঙালির বাঘ সংস্কৃতি: ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
  • ভক্তের কাছ থেকে পাওয়া ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি কী করেছেন সঞ্জয় দত্ত
  • পাচারকারীসহ আরও কিছু কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবনের বাঘ