ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্ত্রী-শ্যালিকাকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আমির হোসেন সামিউল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রোববার গভীর রাতে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা ধজনগরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার পর ওই বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোনসেট নিয়ে পালিয়ে যায় সামিউল।

নিহত জ্যোতি আক্তার (২৫) সামিউলের স্ত্রী ও স্মৃতি আক্তার (১৪) শ্যালিকা। তারা ধজনগর গ্রামের মৃত রৌশন আলীর মেয়ে। বছর তিনেক আগে জ্যোতির সঙ্গে পাশের কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার জামতলী গ্রামের সামিউলের বিয়ে হয়। সে পেশায় দিনমজুর। কখনও মাটি কাটার শ্রমিক হিসেবে, কখনও রাজমিস্ত্রি বা ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে সে। 

জ্যোতি-স্মৃতির ছোট ভাই জিহান মিয়া (১১) জানায়, রোববার রাতে পাশের কক্ষের বিছানায় ঘুমাতে যায় তার দুই বোন। ভগ্নিপতি সামিউল তার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল। সোমবার সকালে জেগে তাকে দেখতে পায়নি। এ সময় পাশের কক্ষে বোনদের ডাকতে যায়। তারা সাড়া না দেওয়ায় সে নাক ছুঁয়ে দেখে কারও নিঃশ্বাস পড়ছে না। ভয় পেয়ে জিহান চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা সেখানে আসে। সংবাদ পেয়ে কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল কাদের ও এসআই মোহাম্মদ ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে আসে। তারা সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান।

জিহানের খালা জাহানারা বেগম সকালে ভাগনিদের মৃত্যুর খবরে পাশের বড়মুড়া গ্রাম থেকে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের কষ্টের শেষ নেই। তাঁর স্বামী ২০১৭ সালে ক্যান্সারে মারা যান। অনেক কষ্ট করে চার সন্তানকে লালন-পালন করছেন।’

জিহান জানায়, দেড় মাস আগে একটি মামলায় তার মা লোনা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে যান। এই সংবাদে বড় বোন জ্যোতি আক্তার এসে তাদের সঙ্গে থাকছেন। দুই দিন আগে স্বামী সামিউলকে নিয়ে জ্যোতি মাকে কারাগারে দেখতে যান। জিহানের বড় ভাই জাবেদ মিয়া (২২) কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে গিয়েছেন। তিনি বিদেশ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর ওই মোবাইল ও বোনদের স্বর্ণালংকারও নিয়ে গেছে সামিউল। 

কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, স্মৃতির পায়ে কাদামাটি লেগে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে বাইরে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরে আনা হয়। আর জ্যোতি আক্তারকে বিছানায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আপাতত থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তে নতুন কোনো তথ্য আসতে পারে। দ্রুত আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত