২০ হাজার টাকায় ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা সমাধানের চেষ্টা
Published: 3rd, March 2025 GMT
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে এক ছাত্রীকে (৭) ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা সালিশে আপসের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিকেলে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজি বাড়ির পেছনে ওই বৈঠক হয়। সেখানে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আপসের জন্য চাপ দেওয়া হয় ভুক্তভোগীর স্বজনকে। যদিও শিশুটির পরিবার তা মানতে রাজি হয়নি। রোববারই মেয়েটির মা মামলা করেন। আজ সোমবার এ মামলার আসামি মো.
গত শনিবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে ওই মেয়েটিকে কৌশলে রাস্তা থেকে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে শাহরুখ। এ সময় শিশুটির চিৎকারে এক পথচারী এগিয়ে এলে ওই তরুণ পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সালিশে আপস মীমাংসার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটির মা সঠিক বিচারের দাবিতে অনড় থাকেন। তিনি স্থানীয় মীমাংসায় রাজি হননি। রোববার তিনি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
মামলার আগেই রোববার সালিশ বসে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, সালিশের শুরুতে শাহরুখের এক স্বজন সালিশকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনরা যাই বলেন তাই মানি।’ তখন পাল্টা আরেকজন বলেন, ‘মানেন বলেই তো স্বাক্ষর দিয়েছেন।’ পরে সালিশে উপস্থিত কয়েকজন মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সালিশকারী মো. আলী ওরফে জনিকে কথা বলতে বলেন। তখন জনি বলেন, ‘শাহরুখ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় সে অভিযুক্ত। সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে, শাহরুখের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০টি বেত্রাঘাত দেবেন অভিভাবকরা। এ বিচার মানলে স্ট্যাম্প সালিশদার আলমগীরের কাছে থাকবে। বিচার না মানলে স্ট্যাম্প নিয়ে যান।’ তখন আলমগীর বলেন, ‘স্ট্যাম্প দেওয়া হবে না।’ এর পর সালিশকারীরা ছেলেকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়ে শাহরুখের বাবাকে বলেন, ‘বেত্রাঘাতের বিষয়টি এখন নেই, তবে মিডলইস্টের দেশে আছে।’ এ সময় জরিমানার টাকা একদিন পর দেওয়ার কথা বলেন শাহরুখের বাবা। তার মা এসে ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করলে সে চলে যায়।
এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা শিশু ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় যারা আপসের চাপ দিয়েছেন, সেই সালিশকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে মো. আলী ওরফে জনি বলেন, তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নিজেকে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, সালিশকারীরা বেশির ভাগই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাহার কন্ট্রাক্টর মুছাপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও নয়ন আওয়ামী লীগ সমর্থক।
জনির ভাষ্য, ‘রোববার বিকেলে সালিশকারী জসিম, নয়ন, বাহার কন্ট্রাক্টর, সিকদারের বাড়ির সাইফুল, দুলাল, হারুনসহ নির্যাতিত শিশুর মা আমাকে ডেকে সালিশে নেন। ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির। শিশুর মা কান্নাকাটি করায় আমি গিয়েছি। আমার যাওয়া ঠিক হয়নি।’ তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সালিশের ভিডিওটি ভাইরাল করে ঘায়েল করতে চাইছে।
মোহাম্মদ আলী জনি বিএনপির রাজনীতিতে থাকলেও তিনি দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার। বিষয়টি তারা দেখছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, ‘সালিশের ভিডিওটি দেখেছি। বৈঠকে যারা ছিলেন, চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি জানান, শিশু ধর্ষণচেষ্টার মামলায় একমাত্র আসামি শাহরুখকে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে নোয়াখালী শহরের সোনাপুর জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ২০ হ জ র ট ক ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।