চলতি বোরো ধান রোপণ মৌসুমের শুরুতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সচ্ছল কৃষকরা সৌরবিদ্যুতে তাদের মাঠে সেচের জন্য অগভীর নলকূপ পরিচালনা করছেন। উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের কৈবর্তগাঁতী গ্রামের মাঠে আবু সাঈদ ও সোহরাব মোল্লা নামের দুই কৃষক প্রথমবারের মতো সৌরবিদ্যুতে সেচ পাম্প চালানো শুরু করেছেন। সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা গ্রহণের জন্য এ কার্যক্রমে তাদের ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এ কর্মকাণ্ডে আগ্রহী কৃষকদের সীমিত আকার সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের দেখে সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপ পরিচালনায় অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগে বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও সুন্দর উদ্যোগ।
কৈবর্তগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবু সাঈদ জানান, তিনি তাঁর স্কিমে ৪০ বিঘা জমিতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে অগভীর নলকূপ পরিচালনার স্কিম করেছেন। সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ তাদের এই নয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রমে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও তার সিংহভাগ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ঋণ হিসাবে প্রদান করছে। তাঁর জমিতে তিনি সিমেন্টের খুঁটির ওপর লোহার ফ্রেম তৈরি করে মোট ১৬টি সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গে কিনেছেন ৫ হর্স পাওয়ারের মোটর। তিনি ইতোমধ্যে সৌরবিদ্যুতে তাঁর স্কিমে পানিসেচ দিতে শুরু করেছেন। এ সোলার প্যানেল বসানোর জন্য সব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
আবু সাঈদ আরও জানান, প্রতিদিন সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সৌরবিদ্যুতে সেচ পাম্প চালানো যাচ্ছে। সূর্যের আলো না থাকলে তাঁর পাম্পটি বন্ধ থাকছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সেচ মৌসুম ফুরিয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্কিমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে কিনে নেবে। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন।
একই এলাকার কৃষক সোহরাব মোল্লা অনুরূপ পদ্ধতিতে তাঁর জমিতে সৌরবিদ্যুতে সেচ প্রকল্প করেছেন। তিনি তাঁর প্রকল্পের জন্য ৩ হর্স পাওয়ারের মোটর বসিয়েছেন। তাঁর স্কিমে জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। সোহরাব মোল্লা আরও জানান, সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপ পরিচালনে তাঁর সব  মিলে ব্যয় প্রায় ৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর অর্ধেক অর্থ তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করেছেন। বাকিটা কিস্তিতে ঋণ দিয়েছে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১। আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে তিনি এই ঋণের অর্থ শোধ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। সোহরাব মোল্লা বলেন, একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও মাসে মাসে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে তাঁর আর মাসিক বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে না। অথবা ডিজেলে মেশিন চালালে যে পরিমাণ তেল কিনতে হয়, সেটাও আর তাঁকে কিনতে হবে না।
এই দুই কৃষকের সৌরবিদ্যুতে অগভীর নলকূপের সেচ প্রকল্প দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার আরও অনেক কৃষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার পূর্ব সাতবাড়িয়া গ্রামের খোরশেদ আলম, সদাই গ্রামের হবিবুর রহমান, মোহনপুর গ্রামের সুরেশ্বর সরকার, বন্যাকান্দি গ্রামের সোনা উল্লাহসহ আরও অনেকে। তারা জানান, এ বছরই তারা তাদের ফসলি মাঠে সোলার প্যানেল বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো.

আসয়াদ বিন খলিল রাহাত জানান, সৌরবিদ্যুতে কৃষকদের অগভীর নলকূপ পরিচালনার উদ্যোগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে খরা মৌসুমে বিদ্যুতের অভাবে কৃষক তাদের সেচ প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক সংকটে পড়েন। সৌরবিদ্যুতে সেচ মেশিন চালালে কৃষক নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করছেন। 
সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আবু আশরাফ মো. ছালেহ্‌ জানান, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি তাঁর এলাকার কৃষকদের সৌরবিদ্যুতে অগভীর সেচ মেশিন পরিচালনায় কৃষকদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে। কৃষকদের সোলার প্যানেল বসাতে যে অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে, তার মূল্য নিরূপণ করে ১০ শতাংশ টাকা ডাউন পেমেন্ট নিয়ে সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হচ্ছে। খুব সহজ ও স্বল্প অর্থের কিস্তিতে কৃষক এই নয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। সীমিত আকারে এই ব্যবস্থায় প্রাথমিকভাবে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে কৃষক নিজেরাই এ সোলার প্যানেলের মালিক হবেন। সেই সঙ্গে সেচ মৌসুমের সময় ছাড়া বাকি সময়ের উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত হারে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। এতে সংশ্লিষ্ট কৃষক নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন এই মহাব্যবস্থাপক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স রব দ য ত ক ষকদ র স সহয গ ত প রকল প র জন য কর ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা

অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৫ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দীর্ঘ ২৭ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিরেছে প্রোটিয়ারা। সেই চক্র শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন মিশন।

আগামী ১৭ জুন গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেই শুরু করবে ২০২৫-২০২৭ চক্র। নতুন এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়টি সিরিজ খেলবে প্রতিটি দল। তিনটি ঘরের মাঠে, তিনটি বিদেশে। বাংলাদেশ খেলবে সর্বমোট ১২টি টেস্ট ম্যাচ, যা এই চক্রে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।

দেশ ছাড়ার আগে এই নতুন চক্র নিয়ে আশাবাদী ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই চক্রে অন্তত তিন কিংবা চার নম্বরে থাকতে চাই।’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল ওঠানামার। প্রথম দুই চক্রে (২০১৯-২১ ও ২০২১-২৩) একটি করে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। তবে ২০২৩-২৫ চক্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। ১২ ম্যাচে ৪টি জয়, তার মধ্যে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জয়ের স্মরণীয় কীর্তিও আছে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট জয় এখন ৫, ড্র ২ এবং হার ২৪ ম্যাচে।

আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

নতুন চক্রে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ একটি সিরিজই খেলবে। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ২০২৬ এর মার্চে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে আতিথেয়তা দিবে বাংলাদেশ। অক্টোবরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে সিরিজ ও  ২০২৭ এর ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ