কুমিল্লা নগরের প্রবেশপথ শাসনগাছা থেকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই সড়ক। এটি মেজর এম এ গনি সড়ক নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটির প্রায় পুরোটায় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে ভরপুর। ফলে এ পথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটির বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা। গত বছরের ২২ আগস্ট রাতে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এর স্রোত বয়েছে সড়কটির ওপর দিয়ে। বর্তমানে ২১ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই বন্যার স্পষ্ট ক্ষত। দ্রুত এটি সংস্কার না করা হলে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া এসব খানাখন্দ আর গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে শতাধিক স্থানে পিচ ঢালাই উঠে ইট-সুরকির কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। সড়কের বেশির ভাগ এলাকাতেই ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। খানাখন্দের কারণে যান চলাচলে চরম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বেহাল সড়কটি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। শাসনগাছা সংলগ্ন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া গোমতী সেতু পার হলেই সড়কটিতে ভাঙাচোরা শুরু। ছোট-বড় গর্তের কারণে গাড়ি হেলেদুলে চলে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার অংশ পার হয়ে বুড়িচং উপজেলার অংশে প্রবেশ করতেই আরও খারাপ অবস্থা চোখে পড়ে। বুড়িচংয়ের ভরাসার, ইছাপুরা, খাড়াতাইয়া এলাকায় খানাখন্দে ভরা সড়কটি। এসব স্থানের অনেক জায়গায় পিচ ঢালাইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। খাড়াতাইয়া থেকে বুড়িচং উপজেলা সদর পর্যন্ত অবস্থা আরও খারাপ। বেশির ভাগ স্থানেই সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর থেকে টাটারা পর্যন্ত অংশটির একই দশা। কয়েকটি স্থানে পিচঢালাই ও সুরকিও বিলীন হয়ে গেছে।

খাড়াতাইয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো.

মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের আগস্টের বন্যার সময় পানির স্রোতে সড়কের অনেক জায়গা একেবারে ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইট, বালু ও মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করা হলেও এখন প্রায় পুরো সড়কটি ভাঙাচোরা হয়ে পড়েছে। এতে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তাঁরা।

বুড়িচং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার সময় সড়কটি অধিকাংশ অংশেই কোমর বা বুকসমান পানি ছিল। পুরো স্রোত গেছে সড়কের ওপর দিয়ে। এর কারণে তীব্র স্রোতে সড়কের খাড়াতাইয়া, নতুন বাজার, ইছাপুরাসহ কয়েকটি স্থান পুরোপুরি ভেঙে যায়। বন্যার আগেও সড়কটিতে খানাখন্দ ছিল, তবে বন্যার পর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে।

বুড়িচং সদরের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটির এত খারাপ অবস্থা গত ১৫ বছরের মধ্যে দেখিনি। বুড়িচং থেকে কুমিল্লা শহরে যেতে আগে সময় লাগত ২০ মিনিট, এখন সেখানে ১ ঘণ্টা লেগে যায়।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আদনান ইবনে হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার কারণে সড়কটি বেশি বেহাল ও ভাঙাচোরা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সড়কটির সংস্কারকাজের দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। এতে মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক উপজ ল র সড়কট র বন য র অবস থ ই সড়ক বছর র সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান