মারা গেছেন ২৪ লাখ শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচানো জেমস হ্যারিসন
Published: 5th, March 2025 GMT
নিজের রক্ত দিয়ে ২৪ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এক অস্ট্রেলীয়, নাম তাঁর জেমস হ্যারিসন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই রক্তদাতা ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছেন গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক নার্সিং হোমে। গতকাল ৪ মার্চ তাঁর পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। মৃত্যুর সময় জেমসের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘সোনালি হাতের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত জেমস শুধু নিজের দেশেই নন, সারা বিশ্বেই আলোচিত এক নাম। তাঁর রক্তে ছিল এক বিরল অ্যান্টিবডি—‘অ্যান্টি-ডি’। তাই তাঁর রক্ত ব্যবহৃত হতো অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বিশেষ ওষুধ তৈরিতে। যেসব মায়ের রক্ত অনাগত শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব মায়ের জন্য ওষুধ তৈরি হতো জেমসের অ্যান্টবডি থেকে।
১৪ বছর বয়সে নিজের বুকের একটি বড় অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত গ্রহণের পর জেমস দাতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়স থেকে তাঁর রক্তের প্লাজমা দান শুরু করেন। ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর প্লাজমা দান করতে থাকেন তিনি। ২০০৫ সালে সর্বাধিক রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই অনন্য কীর্তির রেকর্ড তাঁরই ছিল।
হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, ‘কোনো ধরনের অর্থ খরচ না করে এবং কোনো ধরনের ব্যথা–বেদনা ছাড়াই এত মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরে বাবা গর্বিত ছিলেন। বাবা সব সময় বলতেন, এই (রক্ত) দান কোনো ক্ষতি করে না।’
আরও পড়ুনরক্ত দিলে কি শরীরের রক্ত কমে যায়০৫ জানুয়ারি ২০২৫মেলোশিপ ও জেমস হ্যারিসনের দুই নাতি-নাতনিও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণকারী। অ্যান্টি-ডি টিকা মূলত অনাগত শিশুর ভ্রূণ ও নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ বা এইচডিএফএন নামক মারাত্মক রক্তের ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় এই রোগ দেখা দেয়, যখন মায়ের লোহিত রক্তকণিকা তাঁদের শিশুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। মায়ের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন শিশুর রক্তকণিকাকে হুমকি হিসেবে দেখে। মায়ের রক্ত শিশুকে আক্রমণ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এটি শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে গুরুতর রক্তস্বল্পতা, হৃদ্যন্ত্রের দুর্বলতার মতো রোগসহ মৃত্যুও হতে পারে। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অ্যান্টি-ডি তৈরি হওয়ার আগে এই রোগে আক্রান্ত দুই শিশুর মধ্যে একজন মারা যায় বলে জানা যায়।
জেমস হ্যারিসনের রক্তে এমন অ্যান্টি-ডির পরিমাণ এত বেশি কীভাবে হলো, তার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি যে ১৪ বছর বয়সে প্রচুর রক্ত গ্রহণ করেছিলেন, তার জন্য এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০০ জনেরও কম অ্যান্টি-ডি দাতা আছেন। অস্ট্রেলিয়ার রক্তদাতা সংস্থা লাইফব্লাড অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হ্যারিসন ও অন্যান্য দাতার রক্ত থেকে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ করছে। গবেষকেরা আশা করেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বব্যাপী অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সাহায্যে ব্যবহার করা যাবে।
জেমসের মৃত্যুর কথা শুনে সারা বিশ্বের রক্তদাতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন। সঙ্গে জেমসের অবদানের কথাও স্মরণ করেছেন।
সূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুনযে ৮ উপায়ে বাড়াবেন রক্ত সঞ্চালন১০ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।