নিজের রক্ত দিয়ে ​​২৪ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এক অস্ট্রেলীয়, নাম তাঁর জেমস হ্যারিসন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই রক্তদাতা ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছেন গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক নার্সিং হোমে। গতকাল ৪ মার্চ তাঁর পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। মৃত্যুর সময় জেমসের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

অস্ট্রেলিয়ায় ‘সোনালি হাতের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত জেমস শুধু নিজের দেশেই নন, সারা বিশ্বেই আলোচিত এক নাম। তাঁর রক্তে ছিল এক বিরল অ্যান্টিবডি—‘অ্যান্টি-ডি’। তাই তাঁর রক্ত ব্যবহৃত হতো অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বিশেষ ওষুধ তৈরিতে। যেসব মায়ের রক্ত অনাগত শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব মায়ের জন্য ওষুধ তৈরি হতো জেমসের অ্যান্টবডি থেকে।

১৪ বছর বয়সে নিজের বুকের একটি বড় অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত গ্রহণের পর জেমস দাতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়স থেকে তাঁর রক্তের প্লাজমা দান শুরু করেন। ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর প্লাজমা দান করতে থাকেন তিনি। ২০০৫ সালে সর্বাধিক রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই অনন্য কীর্তির রেকর্ড তাঁরই ছিল।

হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, ‘কোনো ধরনের অর্থ খরচ না করে এবং কোনো ধরনের ব্যথা–বেদনা ছাড়াই এত মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরে বাবা গর্বিত ছিলেন। বাবা সব সময় বলতেন, এই (রক্ত) দান কোনো ক্ষতি করে না।’

আরও পড়ুনরক্ত দিলে কি শরীরের রক্ত কমে যায়০৫ জানুয়ারি ২০২৫

মেলোশিপ ও জেমস হ্যারিসনের দুই নাতি-নাতনিও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণকারী। অ্যান্টি-ডি টিকা মূলত অনাগত শিশুর ভ্রূণ ও নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ বা এইচডিএফএন নামক মারাত্মক রক্তের ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় এই রোগ দেখা দেয়, যখন মায়ের লোহিত রক্তকণিকা তাঁদের শিশুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। মায়ের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন শিশুর রক্তকণিকাকে হুমকি হিসেবে দেখে। মায়ের রক্ত শিশুকে আক্রমণ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এটি শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে গুরুতর রক্তস্বল্পতা, হৃদ্‌যন্ত্রের দুর্বলতার মতো রোগসহ মৃত্যুও হতে পারে। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অ্যান্টি-ডি তৈরি হওয়ার আগে এই রোগে আক্রান্ত দুই শিশুর মধ্যে একজন মারা যায় বলে জানা যায়।

জেমস হ্যারিসনের রক্তে এমন অ্যান্টি-ডির পরিমাণ এত বেশি কীভাবে হলো, তার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি যে ১৪ বছর বয়সে প্রচুর রক্ত ​​গ্রহণ করেছিলেন, তার জন্য এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০০ জনেরও কম অ্যান্টি-ডি দাতা আছেন। অস্ট্রেলিয়ার রক্তদাতা সংস্থা লাইফব্লাড অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হ্যারিসন ও অন্যান্য দাতার রক্ত থেকে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ করছে। গবেষকেরা আশা করেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বব্যাপী অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সাহায্যে ব্যবহার করা যাবে।

জেমসের মৃত্যুর কথা শুনে সারা বিশ্বের রক্তদাতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন। সঙ্গে জেমসের অবদানের কথাও স্মরণ করেছেন।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুনযে ৮ উপায়ে বাড়াবেন রক্ত সঞ্চালন১০ আগস্ট ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ