মব সন্ত্রাসের দায় ড. ইউনূস সরকারকে নিতে হবে: সিপিবি
Published: 5th, March 2025 GMT
দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, সন্ত্রাস ও মব সন্ত্রাসে জনজীবনে আতঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ জানান। তাঁরা বলেন, সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে উপদেষ্টারা সংকটের কথা স্বীকার না করলেও দিন দিন জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে। এর দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তার প্রধান ড.
বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা বলেন, তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ‘জনজীবনের সংকট বেড়েছে। অথচ সরকারপ্রধান বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “অপরাধের পরিমাণ মোটেই বড়েনি।” আমরা প্রশ্ন করতে চাই, তাহলে এ সময় যেসব ঘটনা ঘটছে, এগুলো কি অপরাধ নয়?’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে’—সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য যেদিন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, ওই দিনই পত্রিকার প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠাজুড়েই সারা দেশে খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের খবরও ছাপা হয়েছে।
সিপিবির এই দুই নেতা বলেন, গতকাল (৪ মার্চ) সরকারের একজন উপদেষ্টা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বললেন, ‘মব জাস্টিস’ ও ‘মোরাল পুলিশিং’-এর কোনো সুযোগ এ দেশে নেই। ওই দিন রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে গুলশানের একটি বাড়িতে ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হলো। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণ হলো চোখ বুজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘মব সন্ত্রাস’ চলতে দেওয়া। এদেরকে আইনের আওতায় না আনা।
সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, এর আগেও এ ধরনের অসংখ্য কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ এবং তার ইতিহাস–ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। সরকার এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা নেয়নি। ‘সরকার না চাইলে বা প্রশ্রয় না থাকলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে পারে না’—এই বিখ্যাত উক্তি সর্বজন স্বীকৃত।
বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা অবিলম্বে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অতীতের এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তার মদদদাতাদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করার জোর দাবি জানান। জনজীবনসহ জানমালের নিরাপত্তায় সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে নিজে নিজে এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ