বিশ্বব্যাপী সব মুসলমান একই নিয়মে রোজা রাখেন, সাহ্‌রি ও ইফতার করেন। কিন্তু পবিত্র রমজানকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে মুসলমানদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। এর কারণ, দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যে আচার পালন করেন, মরক্কোর মুসলমানরা তা করেন না। এভাবে রমজান যেন হয়ে ওঠে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি চর্চার মাস।

তুরস্কে এখনো তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা মধ্যপ্রাচ্য ও সংলগ্ন দেশগুলোর অনেক পুরোনো রীতি। এই আধুনিক সময়ে এসেও ঐতিহ্য থেকে সরে যায়নি প্রাচীন সভ্যতার দেশটি। পয়লা রমজানে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে ইফতারের আগে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ। সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছিল ইফতারির প্যাকেট। তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো, ইফতারের সময় হয়েছে। পরিবারগুলো ঘাসের ওপর মাদুর বিছিয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে ইফতার শুরু করল।

ওই দিন আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও খ্যাতনামা কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাউদ্দিন সুমন। ৪ মার্চ রাতে প্রথম আলোকে সেই সন্ধ্যার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি, ‘কামান দাগার আগে অনেকটা সময় ধরে ইসলামি সংগীত পরিবেশন হয়েছিল। সংগীতের সুরের মূর্ছনায় একটা মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হলো। ব্যাপারটা বিশেষভাবে ভালো লেগেছে।’ সুমন জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদের সামনে উপস্থিত থেকে এত বড় আয়োজনের অংশ হওয়া তাঁর জীবনের এক পরম পাওয়া। সে দিন তিনিও সরকারিভাবে বিতরণ করা প্যাকেট সংগ্রহ করে উন্মুক্ত প্রান্তরে বসে ইফতার করেছেন বলে জানালেন।

তুরস্কে তোপধ্বনি দেওয়ার সময়ই মসজিদের মিনারগুলোতে জ্বালানো হয় ‘কানদিল’ নামের একধরনের বাতি। বাতিগুলো জ্বলতে থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। বাতি জ্বালানোর এই ঐতিহ্য বহু পুরোনো। আর তোপধ্বনি কেবল ইফতারের সময় নয়, সাহ্‌রি শুরু ও শেষের সময়ও দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানকে স্বাগত জানানো হয় ভিন্নধর্মী এক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ উৎসবের নাম ‘হক আল লায়লা’। মূলত শাবান মাসের ১৫ তারিখের পরই ছোট শিশুরা রঙিন কাপড় পরে দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এ সময় তারা সুর করে বলতে থাকে, ‘তোমার দরজায় এসেছি, আমাদের দুহাত ভরে দাও। আমাদের দিলে আল্লাহও তোমাদের দেবেন।’ তখন গৃহকর্ত্রীরা শিশুদের হাতে চকলেট, বাদাম, কেকসহ নানা উপহার তুলে দেন। সাধারণত আসরের নামাজের পর শিশুরা বের হয় এবং মাগরিব অবধি মিষ্টান্ন সংগ্রহ করে।

আরব আমিরাতে শত বছর ধরে এই হক আল লায়লা উৎসব চলছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা অন্যকে উপহার দেওয়া এবং ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হয়।

দুবাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিক কামরুল হাসান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকেরা নিজেদের সংস্কৃতিকে লালন করতে ভালোবাসেন। রোজার আগে হক আল লায়লা উৎসব তেমনই এক সংস্কৃতি। তবে করোনার পর অনেক ধরনের সামাজিক উৎসবে বদল এসেছে, অথবা সীমিত হয়ে পড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট কিন্তু ধনী দেশ কাতারে ১৪ রমজানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মানানসই ব্যাগ নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তারা গায় ‘গারাংগাও’ গান। উপহার হিসেবে পায় মিষ্টি ও চকলেট। এটা মাত্র ওই এক দিনই করা হয়।

প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি মিসরে রমজান মাসে বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রঙিন ফানুস ঝুলিয়ে রাখা হয়। মূলত এগুলো লন্ঠন। এসব ফানুস বা লন্ঠন দেশজুড়ে উৎসবের বার্তা আনে।

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় পবিত্র রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মানুষ রমজানের আগে তাঁদের বাড়িঘর রং করান। ঘরের চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন, ধুয়েমুছে একেবারে চকচকে করে তোলেন।

ইফতারের পর ইরাকিরা মেহাবেস নামে একটি খেলা খেলে থাকেন। ৫০ থেকে আড়াই শ জন এ খেলায় অংশ নেন। এটা মূলত আংটি লোকানো খেলা। পালা করে একটি দল আংটি লুকিয়ে রাখে। অন্য দলের সদস্যদের ধারণা করতে হয় যে আংটিটি কার কাছে আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। রমজানের আগে তাঁরা নিজেদের শরীর পবিত্র করার জন্য বিশেষ একধরনের গোসল করে থাকেন। একে বলা হয় পাদুসান। জাভা দ্বীপের মুসলিমদের বিশ্বাস, এই গোসল কেবল শরীর নয়, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে নয়, এই গোসল করা হয় পাহাড়ি ঝরনা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক জলাশয়ে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ইফতারের পর রাইভারু নামে একধরনের কবিতা পড়া হয়। এটা সাধারণত চার বা ছয় লাইনের হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে দেশটিতে রাইভারু ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মানুষ রাইভারু গাইতে গাইতে ইফতার করেন। কেউ কেউ আবার ইফতারের পর সমবেত সংগীতের মতো এটা আবৃত্তি করেন।

আমাদের ঢাকা শহরে কাসিদা গেয়ে সাহ্‌রির জন্য রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগানোর সংস্কৃতি একসময় চালু ছিল। এখন তেমন নেই। রোজাদারদের জন্য যাঁরা এমন ত্যাগ স্বীকার করেন, মিসর ও জর্ডানে তাঁরা মেসাহারাতি নামে পরিচিত। আর মরক্কোয় তাঁদের ডাকা হয় নাফারস নামে। তুরস্কের গ্রামেগঞ্জে দাভুল নামে একধরনের ঢোল পিটিয়ে এই কাজ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে যে তরুণেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বকশিশ পান, এমনকি অনেক পরিবার তাঁদের ডেকে নিয়েই সাহ্‌রি করিয়ে থাকে। বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত র র প একধরন র মসজ দ র ম সলম ন র স মন ত র কর রমজ ন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ

দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই। 

মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না। 

বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার। 

যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য  বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”

চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
  • টোকিওতে জমেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ