ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 9th, March 2025 GMT
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আলটিমেটাম (সময় বেঁধে) দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার মধ্যরাতে রাজু ভাস্কর্যে দুই ঘণ্টা অবস্থান শেষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে হলে ফিরে যান তাঁরা।
শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে আনিকা তাহসিনা নামের এক ছাত্রী লিখেছেন, ‘ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যকে ‘‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’’ হিসেবে ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। আমরা আর চুপ থাকব না।’
এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ড.
বিক্ষোভে স্লোগান ওঠে, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তারা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তারা।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় ধর্ষকদের প্রকাশ্য ফাঁসির দাবি জানিয়ে রোকেয়া হলের নারী শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। মিছিলটি রোকেয়া হলের সামনে থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার হলের সামনে ফিরে আসে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও বিগত বছরগুলোয় যারা ধর্ষণের জড়িত ছিল তাদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের মিছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
ধর্ষণের প্রতিবাদে গত রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।