বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে সংঘর্ষে আহত হন মো. ফাহিম। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে। হাত ও পায়ে আঘাত পান ফাহিম। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘সামান্য আহত’। শারীরিক যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে তাঁর নাম ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্ত করেছে প্রশাসন। তবে এটি মানতে নারাজ তিনি।

ফাহিমের দাবি, ‘হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পায়ের লিগামেন্ট।’ তাই তিনি বাড়তি সুবিধা পেতে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে নাম তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। এ জন্য নানা পরীক্ষা করে গুরুতর আহত হওয়ার বিষয় প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিচিত কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক দিয়ে দায়িত্বশীলদের কাছে করাচ্ছেন তদবির।

শুধু ফাহিম নন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আঘাত পাওয়া অনেকেই চাচ্ছেন ‘এ’ কিংবা ‘বি’ ক্যাটেগরির সুবিধা। আন্দোলনে আহতদের তিন ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বাড়তি সুবিধা পেতে ‘সি’ ক্যাটেগরির কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে করাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দেখাচ্ছেন ডাক্তারও। বিষয়টি নিয়ে চাপে আছে প্রশাসন। তবে শত কৌশল কিংবা চাপ প্রয়োগ করে কেউ অনৈতিকভাবে কোনো তালিকায় ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।

চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের তালিকা করা, জমা দেওয়া কাগজপত্র বাছাইসহ যাবতীয় বিষয় তদারকি করছে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ কয়েকটি দপ্তর। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আবেদন পড়েছে সাড়ে ৫০০-এর বেশি। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করে এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে পাঁচজনকে। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত ৪৩ জন এবং ৫০৭ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। ক্যাটেগরিতে বৈষম্য হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আহতদের অনেকেই।

কয়েকটি দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, আহত বেশ কয়েকজন চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তার কক্ষে ছুটছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেখা হয় শরীফুল ইসলামের সঙ্গে। আন্দোলনে আহত শরীফুল আছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। টানা কয়েকদিন এখানে এসেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আন্দোলনে গিয়ে একাধিকবার গুরুতর আহত হয়েছেন। গ্রেড নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তিনি ‘এ’ কিংবা ‘বি’ গ্রেডে নাম তালিকাভুক্ত করাতে চাচ্ছেন।

শরীফুল বলেন, ‘আন্দোলনের সময় নগরের নিউমার্কেট ও দুই নম্বর গেটে আমার ওপর কয়েক দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা। হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছি। এখনও ভালোভাবে হাঁটতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের বলেছি, ডাক্তার আমার এক পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু টাকা না থাকায় এমআরআই পরীক্ষা করাতে পারিনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করতে হবে। তারপর ক্যাটেগরি সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তারা।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ডা.

মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের পাঁচ সদস্যের টিম অত্যন্ত সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই থেকে শুরু করে সব কাজ করছি। এর প্রধান লক্ষ্য প্রকৃত আহতরা যাতে তালিকায় সঠিক ক্যাটেগরিভুক্ত হন ও কোনো সুবিধাবাদী যেন সুযোগ নিতে না পারে। ডাক্তারি সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র একাধিকবার খতিয়ে দেখে এরই মধ্যে সাড়ে ৫০০-এর অধিক আহতকে ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটেগরির অনেকেই ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত হতে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।” এখনও অনেকেই তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করছেন বলে জানান তিনি।

কমিটিতে থাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে আমাদের মনে হয়েছে, সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিষয়টি চিকিৎসকরাও কাগজপত্রে উল্লেখ করেছেন। তার পরও তা মানতে নারাজ তারা। ক্যাটেগরি সংশোধন করতে তারা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন।’ চমেক হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আহতদের অনেকেই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, অনেক মুমূর্ষু ছিলেন– এমন উল্লেখ সংবলিত সার্টিফিকেট পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ অন্যকে দিয়ে তদবিরও করছেন।’

‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্তদের এককালীন ৫ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ৩ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা পাবেন। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ১ লাখ টাকা, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। 

আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী কলি আক্তার বলেন, “আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামীর ডান হাত ভেঙেছে। আট মাস ধরে তিনি শয্যাশয়ী। এমন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ আমার স্বামীকে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ক্যাটেগরি।” আহত রিয়াদ সুলতানা বলেন, ‘সাহস নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অথচ আজ কেন আমাদের এর কাছে ওর কাছে যেতে হবে? আহতদের যাবতীয় বিষয় দেখভালের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা এখন নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কে কোন কমিটিতে কী পদ বাগিয়ে নেবেন, সেটিই তাদের এখন বড় মিশন।’

আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সহযোগিতা নিতে গেলে আগে সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। চিকিৎসা নিতে গেলে সমন্বয়কদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে বলা হয়। চোখ নষ্ট হওয়ার মতো গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে ‘সি’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে। যাদের সঙ্গে সমন্বয়ক কিংবা সহসমন্বয়কদের সখ্য আছে, তাদেরই ভালো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের অধিকাংশই চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অন্যদের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র ক গজপত র ত হয় ছ ন ভ ক ত কর আহতদ র র অন ক কর ত র পর ক ষ অন ক ই ব ষয়ট করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা

অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) পদ্ধতি সারা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এ মডেল এখনো বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না। হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে, সেগুলো হচ্ছে মূলত সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। ফলে প্রকৃত পিপিপির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ। চার-পাঁচটি প্রকল্প হতে চললেও এগুলোর বেসরকারি অংশীদারদের প্রায় সবাই বিদেশি।

পিপিপি মানেই হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বিষয়। সরকারি ভাষ্য হচ্ছে, দেশের বড় পুঁজির মালিক বা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ব্যাপারে ধৈর্য কম। এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার নিজেই একটা সমস্যা। কারণ, সরকার এমন কোনো নীতি পদক্ষেপ নিয়ে রাখেনি, যাতে বিনিয়োগকারীরা পিপিপি প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।

এমন টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপির জন্য ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। ২ জুন তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা এবারের বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সহজে সেবা দিতে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল চালু করেছে। এই পোর্টালে ৪৩টি সংস্থার ১৩৪টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় চালু করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ)’। এর মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্মে আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা প্রদান করা যাচ্ছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন’ তৈরি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগগুলোকে কার্যকর বিনিয়োগে পরিণত করার প্রক্রিয়া সহজ হবে।

পিপিপির সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পিপিপি কর্তৃপক্ষ গঠন করে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছর ৩৪টি ও পরেরবার ৪০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে ৮১টি প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি রয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষের হাতে।

মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে নাআবুল কাসেম খান, সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার।

এর মধ্যে ২০টি আছে শনাক্তকরণ পর্যায়ে, যেগুলো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর উন্নয়ন পর্যায়ে আছে ২৯টি। এ পর্যায়ে থাকার অর্থই হচ্ছে এদের সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে মাত্র। ১৪টি প্রকল্প আছে দরপত্র ডাকার পর্যায়ে অর্থাৎ চুক্তির কাগজপত্র তৈরি হয়ে আছে। আর ১৮টি রয়েছে বাস্তবায়ন পর্যায়ে।

পিপিপি হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে। নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও)—পিপিপির এই তিন পদ্ধতিই প্রচলিত।

জানতে চাইলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মো. আলী আজম আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছে।’ আলী আজম আল আজাদ অবশ্য বিশ্বাস করেন, এ খাতে বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাড়বেই।

এ এম এ মুহিতের যে উদ্যোগ

তুরস্ক, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে সাফল্যের উদাহরণ সামনে রেখে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপির দিকে নজর দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

পিপিপির মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, এমন আশাই করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার ৬ মাসের মাথায় যখন ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হলো, তখন ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নাম দিয়ে আবদুল মুহিত পিপিপির জন্য বরাদ্দ রাখেন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; নদী, সমুদ্র ও বিমানবন্দর; সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল; সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ দরকার। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এগুলো করা কঠিন। তখন এসব কথাই বলেছিলেন আবদুল মুহিত।

শুধু কথা বলেই অবশ্য দায়িত্ব সারেননি মুহিত। ১০ বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিপিপি আইন, নীতিমালা, বিধিমালা সবই করেছেন। প্রতি অর্থবছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করতেন। কিন্তু বেসরকারি খাতের অনাগ্রহের কারণে এ খাতের জন্য বরাদ্দ করা পুরো টাকাই পড়ে থাকত। তবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) জন্য প্রতিবারই অবশ্য সামান্য অর্থ খরচ হতো, এই যা।

পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছেমো. আলী আজম আল আজাদ, মুখপাত্র, পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

যেসব প্রকল্প হচ্ছে

বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা পিপিপি প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর। প্রকল্পটির আংশিক উদ্বোধন হলেও এখনো কাজ বাকি আছে। ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে এ প্রকল্পের বেসরকারি বিনিয়োগকারী।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। জিটুজি পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ দেবে ঋণদাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। কাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’।

হাতিরঝিল-রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য চীনের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিএল) সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।

ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের কাজও হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরকে বাইপাস করে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে সরাসরি যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে এটি। প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। চীনের সিচুয়েন রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ করপোরেশন লিমিটেড, বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ এবং ইউডিই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড হচ্ছে এটির যৌথ অংশীদার। কিছু অংশ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ এম এ মুহিত যখন ২০০৯ সালে বিষয়টি নিয়ে এলেন, আমি তখন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। তাঁকে খুবই সমর্থন করেছিলাম। সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন ছিলেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আমাকে একপর্যায়ে বললেন, ভালো প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি), অগুরুত্বপূর্ণগুলো পাঠিয়ে দেয় পিপিপিতে। এভাবে তো পিপিপি হবে না।’

আবুল কাসেম খান আরও বলেন, মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। এদিকে পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে না, আগে নীতি সমস্যা দূর করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • নরসিংদীতে তিন গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ১
  • চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে কেউ নিচ্ছেন চিকিৎসা, কেউ করাচ্ছেন পরীক্ষা
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • ১৭ দিন পর কাটলো অচলাবস্থা, চক্ষু হাসপাতালে সেবা চালু
  • ১৭ দিন পর কাটলো অচলাবস্থা, চক্ষু হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিতে দু’জন আহত