ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ (আরএলআরসি)। রোববার জোটের এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি এবং ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

জোটের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধর্ষণ আইনের সংস্কার; ধর্ষণের সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করে তা বৈষম্যহীন করা; ধর্ষণের আইনে ‘পেনিট্রেশন’কে সংজ্ঞায়িত করা, ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিষয়।

একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের রায় ও সংশোধিত আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, আইনগত সংস্কার বিষয়ে অপরাধের মাত্রা অনুসারে আনুপাতিক হারে শাস্তি নির্ধারণ ও সাজা প্রদানের নির্দেশিকা প্রবর্তন এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে জোটটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ও মেয়েশিশুদের প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশের সংবিধান, বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডো) অনুসারে মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ধর্ষণ প্রতিরোধ ও এই অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ২০১৮ সালে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার এখনই’–সংক্রান্ত প্রচারণা শুরু করে আরএলআরসি। সাম্প্রতিক ঘটনায় পুরোনো সেসব দাবি হালনাগাদ করে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জোটে থাকা ১৭টি সংগঠন। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, উইক্যান, উইমেন ফর উইমেন, একশনএইড বাংলাদেশ, অ্যাসিড সার্ভাইভারস ফাউন্ডেশন, ইয়াং উইমেন্স খ্রিষ্টিয়ান অ্যাসোসিয়েশন-ওয়াইডাব্লিউসিএ, কেয়ার বাংলাদেশ, জাস্টিস ফর অল নাও, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-ডব্লিউডিডিএফ, নারীপক্ষ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ব্র্যাক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইম ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ