প্রতিশ্রুতি
গোলাম সরোয়ার
আমি স্বপ্ন দেখি শ্রেণিহীন পৃথিবীর,
কল্পনায় চলে যাই শৃঙ্খলহীন সমাজে,
জানি হবে মুক্তি, হবে যুক্তির জয়।
হবে না অস্ত্রের লড়াই, বৈষম্যের খেলা
হবে না সাম্প্রদায়িক হিংসা,
কোনো ভাই-বোন বর্ণবাদের শিকার হবে না,
ধর্ষিত হবে না আমার কোনো বোন,
নিপীড়িত হবে না আমার কোনো ভাই,
শৃঙ্খলের নামে পড়বে না শিকল,
বিনা দোষে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলবে না,
খাদ্যের জন্য কোনো মা কাঁদবে না,
কোনো প্রৌঢ় অসহায় ভাববে না।
শোষকের দ্বারা শোষিত হবে না,
আর কোনো শিশু উদ্বাস্তু হবে না,
পথে-প্রান্তরে উলঙ্গ হয়ে ঘুরবে না কেউ,
জন্ম নেবে না শরণার্থী শিবিরে,
শুনবে না অভাব আর অনটনের গল্প,
ঈদের চাঁদের অপেক্ষায় চেয়ে থাকবে না,
বড় হবে না অন্যের আশ্রয়ে,
ফিরে আসবে আবার সজীবতা–
কেটে যাবে সব নির্জনতা।
আধপোড়া এক চাঁদ
শাহজালাল সুজন
রাতের তারায় চেয়ে দেখি
আধপোড়া এক চাঁদ,
দিনের আলোয় অমাবস্যা
পাতছে যেন ফাঁদ।
শিয়াল হাঁকে দিনদুপুরে
নাহি তাদের ভয়,
মানুষগুলো গর্তে ঢুকে
করছে নীতির ক্ষয়।
জরাজীর্ণ ব্যাধির দেহে
দেখায় পেশি বল,
সুঠামদেহী বাঁচার তরে
করছে নানান ছল।
বাঘ ও মহিষ খায় যে বসে
এক ঘাটেতে জল,
আবেগ ছকে অঙ্ক কষে
বিবেক পায়না ফল।
স্বার্থে ঘেরা যুগের আয়নায়
প্রশ্নবিদ্ধ হই,
সাদা পাতায় কালো ভরা
লাভ কি খুলে বই?
রঙিন স্পন্দন
তাসনিম মীম
রুক্ষতা কাটিয়ে এলো নতুন পল্লব
কুঁড়ি ও ফুলের মেলা,
চারিদিকে রঙিন বসন্তের শোভা।
গাছে গাছে নতুন পাতা
শিমুল পলাশের লাল আভা,
জীবনের স্পন্দন, প্রকৃতির নবজাগরণ
গান ও কবিতার মোড়ক উন্মোচন
কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের যেন পুনরুজ্জীবন।
রং, গন্ধ, সুর আর স্পর্শ, বসন্ত যেন
জীবনের সবটুকু আনন্দের এক মহামিলনক্ষেত্র।
কৃষ্ণচূড়ার মতো স্বপ্নগুলো হয়ে উঠুক রঙিন
কোকিলের সুরের মতো প্রতিটা জীবন হোক
সুরেলা– এটাই বসন্তের প্রতি আমার বন্দনা।
একাকিত্ব
নকুল শর্ম্মা
সৃষ্টির গল্পরা হারিয়ে ফেলে সব কাহিনি
আঁশটে গন্ধে দৌড়াচ্ছে অস্থির সময়,
যেখানে তোমার উপস্থিতি নেই বহুকাল ধরে।
বৃথা চিৎকারে কেঁপে উঠে আকাশ
ম্লান হয়ে আসে তোমাকে
পাওয়ার অদম্য স্পৃহা,
কুয়াশার কোলে প্রহর কাটায় একাকিত্ব হৃদয়
সময়ের তলানিতে পড়ে থাকে প্রশ্নবান স্মৃতি।
কোলাহল থামে না
নিস্তব্ধতার মিনার জাগে বৈভবে
টুকরো টুকরো হয়ে যায় গল্পের সংলাপ,
ঔদ্ধত্য তীরন্দাজের অশনিসংকেত
দক্ষযজ্ঞের বার্তায় অন্য এক কাহিনির জন্ম।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।