জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। জনগণের সামনে আবারও এসেছে গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ। দেড় হাজার শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা চব্বিশে রচিত হলো, তা ৫ আগস্টের কয়েক দিন আগেও ছিল প্রায় অসম্ভব কল্পনা।

সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শাসন অপরাজেয় ও দুর্লঙ্ঘ একথা ভেবে বসেছিলেন অনেকেই। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে আশাহত হয়ে পড়ছিলেন অনেকেই। ভেবেছিলেন, এই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের ভবিতব্য। কিন্তু ইতিহাসের ললাটে গোপনে লিখিত হয়ে গিয়েছিল আরেক গন্তব্য। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন জেগে উঠেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। 

অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র জাগরণ, ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। বরং এটাই যেন নিয়ম। যখনই দেশ কোনো গভীর সংকটে নিপতিত হয়, সব আশা নিঃশেষিত হয়ে যায়, তখন ছাত্ররা সামনে চলে আসে। তাদের ডাকে আপামর জনতা পথে নামে। 

এটা হয়তো আমাদের কৃষি অধ্যুষিত সমাজের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একটা বিশেষ মনোগঠন। যে মনোগঠনের কেন্দ্রে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কে এক আশাপ্রদ রূপকল্প। কৃষক সমাজে বহু বছর ধরে এই রূপকল্প প্রচলিত যে ভবিষ্যতে তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানটি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। পরিবারটিকে নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে পরিচালনা করবে। এই রূপকল্প আজও জাগরূক। শুধু গ্রামীণ সমাজে নয়, গ্রাম থেকে আসা শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেও পরিবারগুলো বিশ্বাস করে, ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে এবং ভাগ্য ফেরাবে। 

পরিবারগুলোর এই খণ্ড খণ্ড স্বপ্ন হয়তো ইতিহাসের বিশেষ দিনক্ষণে যৌথ স্বপ্নে পরিণত হয়। জনগণের একটি বড় অংশ সমস্বরে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অথবা ছাত্ররা সেই দায়িত্ব তুলে নিলে জনসাধারণের পক্ষ থেকে এক বাক্যে তাতে সমর্থন জানিয়ে দেওয়া হয়। 

আমরা ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে, ১৯৯০ সালে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। যখনই জাতি কোনো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে এবং সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে ছাত্ররা, তখনই সাধারণ জনগণ জেগে উঠেছে। প্রশ্নহীনভাবে পথে নেমে সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছে।

তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আগের গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনগুলোর চেয়ে অনেক বিস্তৃত ও গভীর ছিল। হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ছাত্ররা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে তারা সত্যিই পরিবর্তন চায়। সেই প্রাণের বিনিময়ে মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল।

আমরা এখন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি। তরুণরা তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের যে রূপরেখা হাজির করেছিল, তা নিয়ে চারদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অভূতপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে চলেছে। সংস্কারের জন্য চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দ্বিমত অবশ্যই থাকবে। সমাজে নানা মত থাকলে নানা পথও থাকবে। কিন্তু তরুণরা এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে, মানুষের মনে এমন এক স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে– যা থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। 

পুনর্গঠিত নতুন এক বাংলাদেশ তৈরি না হলে এবার বিপুলভাবে আশাহত হয়ে পড়বে জাতি। ফলে এই কর্মযজ্ঞকে সফল করে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণজাগরণের মধ্য দিয়ে তরুণরা যে স্বপ্ন বপন করেছে, তাকে জাগরূক রাখতে হবে। স্মরণে, উদযাপনে তারুণ্যের শক্তি যেন বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় নিয়ে যেতে পারে সেজন্য যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। 

হার না মানা যে শহীদেরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তাদের কথা মনে রেখে সহযোদ্ধাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে তারুণ্যের উৎসবে পরিণত করতে হবে।

মাহবুব মোর্শেদ: লেখক ও সাংবাদিক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আর এস ক্যাফে রেস্টুরেন্টে আয়োজিত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত ও আহত ১২ পরিবারের হাতে নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। 

আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে বিএনপি ও জিয়া পরিবার  সব সময় আছে ও থাকবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি জনগণের দল, বিএনপির কাছে আগে দেশ ও দেশের মানুষ। শত ষড়যন্ত্র ও বিপদেও বিএনপি দেশ ছেড়ে কোথাও যায়নি। বিএনপি মানুষের পাশে থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের অনুষ্ঠেয় বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে যে ধোঁয়াশা, যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে সেসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনায় আগামী দিনে একটি রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে। জনগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের অধিকার ফিরে পাবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে এ বৈঠকের মাধ্যমে তা কেটে যাবে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সভাপতিত্বে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজাহারুল আলম, শ্রীপুর ইউসিসি’র চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি  মাহফুল হাসান হান্নান, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের নেতা মাসুদ রানা প্রমুখ। 

সন্ধ্যায় কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৫ ব্যাচের আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. জাহিদ বলেন, তিনি কাওরাইদ কে এন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি। এ স্কুলের সাবেক শিক্ষক মোছলেম উদ্দিন অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিক সমাজ শাসকদের পক্ষে থাকে কেন?
  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ