আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভিড় এড়াতে রমজানের শুরুতেই কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী। দেখে মনে হয় মার্কেটগুলোতে ঈদের আমেজ লেগেছে। রোজার দ্বিতীয় দশকেই জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদবাজার।

বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভিড়, মার্কেটগুলোতে বাড়ছে কেনাবেচার ব্যস্ততা। অভিজাত বিপণি বিতান, শপিং মল, মার্কেট, ছোট-বড় ব্র্যান্ডের দোকান-আউটলেট এমনকি ফুটপাতেও ধুম পড়েছে কেনাকাটার।ঈদ উপলক্ষে মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) ছুটির দিনে শহরের প্রতিটি মার্কেটে ও চাষাড়া হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাতে মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখার মতো ছিল। সকাল থেকেই ক্রেতা ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক কিনতে দেখা যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের আলমাছ পয়েন্ট, বেইলি টাওয়ার, সমবায় মার্কেট, প্যানোরমা প্লাজা, মার্ক টাওয়ার, টপটেন মার্ট, হক প্লাজা, সান্তনা মার্কেট, আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার, জিরো বাজার, লুৎফা টাওয়ার, ইজি ফ্যাশন, সায়াম প্লাজা, হাসনাত স্কয়ার, লুৎফা টাওয়ার, সায়াম প্লাজা, বর্ষণ সুপার মাকেট, এফ রহমান সুপার মার্কেট, ফ্রেন্ডস মার্কেটে, সোলস্তা, আড়ৎসহ ছোট-বড় মার্কেটে গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি পোশাক।

অন্য বছরগুলোতে রোজার সময় বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য মানুষজনের উপস্থিতি দেখা গেলেও এ বছর দুপুরের আগে থেকেই মানুষজন মার্কেটে ভিড় করছেন। এতে করে আগেভাগেই ঈদের বাজারে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। 

পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টিশার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন। 

দোকানগুলোতেও সিজনাল ডিসকাউন্ট ও ফেস্টিভ অফারের এবং নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলেও মিলছে ছাড় এবং ক্যাশব্যাক অফার।

দোকানিরা জানান, এ বছর ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। এবার নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে।

এছাড়াও মসলিন, সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টিশার্ট এবং শিশুদের জন্য নানা রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। 

এসব মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় দেশে একটি স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যা বেচাকেনার জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করছে। তবে মানুষের মধ্যে ছিনতাইয়ের একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে, যার কারণে অনেকেই দিনের বেলাতে কেনাকাটা করার প্রতি ঝুঁকছেন।

এতে করে আবার এই এলাকায় অন্য বছরের মতো মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটার পরিবেশে ভাটা পড়েছে। আবার ব্যবসায়ী ও দোকানিরাও কিছুটা আতঙ্কে সময় পার করছেন। সেজন্য, আগের তুলনায় এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি জোরদার করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

কালীরবাজার ফ্রেন্ডস মার্কেটের বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, অন্য বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। এবার অধিকাংশ ক্রেতারাই দিনের বেলা কেনাকাটা করে ফেরত যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমরাও ক্রেতার চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে দোকানে কাপড় তুলেছি। আশা করছি এবার অন্যবারের তুলনায় ব্যবসা ভালো হবে।

ক্রেতারা বলছেন, বরাবরের মতোই ঈদকে সামনে রেখে কাপড়ের বাড়তি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। স্কুলকলেজ রোজার শুরু থেকেই বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই আগেভাগে কেনাকাটা করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। সেই বিষয়টি বুঝতে পেরে দাম ছাড়তে চাইছেন না বিক্রেতারা।

মৌসুমী আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, যেহেতু বাচ্চার স্কুল বন্ধ সেজন্য শেষ সময়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই প্রিয়জনের জন্য কাপড় কেনাকাটা করছি। ব্যবসায়ীরা দাম কিছুটা বেশিই চাচ্ছেন।

দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া এবার সবাই রোজা রেখে কষ্ট হলেও দিনের বেলাতেই কেনাকাটা শেষ করতে চাচ্ছেন। সেজন্য ভিড়ও একটু বেশি।

অপূর্ব আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর রোজার ঈদেই সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা করা হয়। শেষ সময়ে ভিড় বেশি থাকে সেজন্য আগেভাগেই কেনাকাটা করছি। একটু বেশি ঘুরতে হচ্ছে, তারপরও পরিবার-পরিজনের খুশির কাছে এই কষ্ট কিছুই না।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: রমজ ন ন র য়ণগঞ জ ঈদ স জন য পর ব শ র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ