মানুষের কারণে পশুপাখির জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়া পৃথিবীতে এখনও অনেক শহর-গ্রাম আছে, যেখানে প্রাণীরা নির্বিঘ্নে বসবাস করছে। সেসব এলাকায় তারাই প্রধান প্রাণী। তেমনই কিছু শহর-গ্রাম কিংবা দ্বীপ নিয়ে জানাব আজ।
ঘোড়ার দ্বীপ: যুক্তরাষ্ট্রে ঘোড়াদের এক দ্বীপ আছে, যেখানে ঘোড়া নির্বিঘ্নে চলাফেরা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া এবং মেরিল্যান্ড রাজ্যের এই দ্বীপের নাম অ্যাসাটেগ দ্বীপ; যাকে হর্সল্যান্ডও বলা হয়। এই দ্বীপ মূলত বিখ্যাত ঘোড়ার জন্য। এখানে এরা সৈকত থেকে শুরু করে সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। তাই মানুষের বসবাস নেই বললেই চলে। তবে পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসতে পারেন। এখানে বন্যঘোড়া ছাড়াও আরও ৩২০টির বেশি প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। তাই এ দ্বীপকে প্রাণীদের অভয়ারণ্যও বলা যায়। পর্যটকরা এখানে বন্যঘোড়ার সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন কিংবা নির্মল সৈকতে সাইকেল চালাতে পারেন। এ দ্বীপে ৩৭ মাইলের মতো দীর্ঘ সৈকত আছে।
শিয়ালদের গ্রাম: আমাদের গ্রামে শিয়াল এলে আমরা আতঙ্কিত হই; তবে জাপানের এ শিয়ালদের গ্রামে মানুষ এলে শিয়ালরা আতঙ্কিত হয় না। জাপানের শিরোইশির কাছে পাহাড়ে অবস্থিত একটি ‘গ্রাম’ আছে; যা ১০০টিরও বেশি প্রাণী এবং ৬টি বিভিন্ন জাতের শিয়াল দিয়ে পরিপূর্ণ। জাও ফক্স ভিলেজ নামে এই গ্রাম জাপানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। শিয়ালরা অবাধে এই গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন। শিয়াল জাপানি লোককাহিনি এবং লোককাহিনিতে জনপ্রিয় প্রাণী। পাহাড়ের কোলে গ্রামটিতে শিয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রাণী আছে। তবে শিয়ালই এখানকার মূল আকর্ষণ। দর্শনার্থীরা এখানে ফি দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শিয়ালকে খাবার দিতে পারবেন। তবে তাদের বেশ সতর্ক থাকতে হয়।
সিল দ্বীপ: দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্রের মাঝখানে এক অদ্ভুত দ্বীপ। যেখানে আছে অসংখ্য সামুদ্রিক সিল। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কাছেই আছে এমন এক দ্বীপ। সিল দ্বীপের বেশির ভাগ বাসিন্দা সিল প্রাণী। দ্বীপটিতে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৮ হাজার সিলের বাচ্চা জন্ম নেয়। মূলত সিল শিকার এবং এদের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে এই দ্বীপ সিলদের জন্য সংরক্ষিত। তবে প্রায়ই এই দ্বীপে সিল শিকারের জন্য হাঙর আক্রমণ করে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঙর বেশি আক্রমণ করে। তাছাড়া অন্য সময় সিলগুলো মাছ ধরে শান্তিতে বসবাস করে দ্বীপে।
হরিণের শহর: এশিয়ার মধ্যে প্রাণীদের জন্য অন্যতম অভয়ারণ্য এই শহর। জাপানের নারা শহরে মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় হরিণ। রাস্তাঘাটে হরিণ সেখানে স্বাভাবিক ব্যাপার। এ শহরে প্রায় ১ হাজার ২০০টি হরিণ ঘুরে বেড়ায়। কথিত আছে, প্রাচীনকালে এই শহরে হরিণ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। হরিণকে এখানে পবিত্র প্রাণী মনে করা হয়। তাই এখানে হরিণ নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায়। নারা শহরে একটি পার্কও আছে। যেখানে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াতে পারেন।
কাঠবিড়ালির দ্বীপ: যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলের এই মনোরম দ্বীপটিতে বিরল লাল কাঠবিড়ালির আবাসস্থল। ব্রাউনসি দ্বীপ নামে এই দ্বীপ যুক্তরাজ্যের বিশেষ দ্বীপ। কেননা, এখানে কাঠবিড়ালি ছাড়াও ২৫০ ধরনের প্রাণী আছে। পরিযায়ী পাখিও দেখা যায়। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন প্রাণী দেখা যায়। তবে কাঠবিড়ালি এখানকার প্রধান প্রাণী। প্রায়ই এদের গাছে গাছে ঝুলতে দেখা যায় এবং বাদাম কুড়াতে দেখা যায়। ১৯৬২ সালে ব্রাউনসি দ্বীপটি বন্যপ্রাণী এবং মানুষের উপভোগের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। বর্তমানে সেখানে পর্যটকরাও যেতে পারেন। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।