এক বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ
Published: 15th, March 2025 GMT
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার এক বছর আজ। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁর মায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিকও জামিনে মুক্ত।
দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার পর জবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। যদিও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট জবি প্রশাসন সূত্র শুক্রবার সমকালকে জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জবির বেশ কিছু শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতন এবং জবি শিক্ষকদের সহযোগিতা না পেয়ে ছুটিতে গিয়ে গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। ঘটনার রাত থেকে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ১৮ মার্চ আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা পুলিশে হস্তান্তর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এখন উভয়েই জামিনে মুক্ত।
জবি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জবি প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.
প্রতিবেদনে কী আছে, এ নিয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কী আছে, তা আজও জানতে পারেনি অবন্তিকার পরিবার। জবির তদন্ত প্রতিবেদন ‘গোপন’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে অবন্তিকার বাবা মারা যান। ছেলেও ছোট। মেয়ের বিচারের জন্য এখন একাই লড়াই করে যাচ্ছি। মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য জবিতে ভর্তি করেছিলাম, কত স্বপ্ন ছিল! কিন্তু সেখানকার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনে মেয়েকে অকালে জীবন দিতে হলো। এ মৃত্যুর দায় জবি প্রশাসন এড়াতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দুই হোতাকেও তো আদালত জামিন দিয়ে দিলেন। তারা কি আদৌ শাস্তি পাবে? জড়িতদের নাম তদন্ত কমিটি ও পুলিশকে দিয়েছি। তদন্ত ও বিচারের নামে আমার সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জবির রেজিস্ট্রার ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত জানুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভায় অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আত্মহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত– এ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। তাই এখনই এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে যারাই জড়িত, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, অবন্তিকার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু ছবি, স্কিন শট, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের বেশ কিছু খুদে বার্তা পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হয়েছে। অবন্তিকার মোবাইল ফোনটি আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এর প্রতিবেদনও এসেছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন না আসায় এতদিন আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে বিলম্ব হয়েছে। এখন সবকিছু আমাদের হাতে আছে। শিগগিরই প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।