মব জাস্টিস কী, ইতিহাস কী বলে, কোন দেশে বেশি হয়
Published: 16th, March 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৪ মার্চ ছিনতাইকারী তকমা দিয়ে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। এতে ওই দুজন আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ইরানের এই দুই নাগরিক ছিনতাইকারী ছিলেন না। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। একপর্যায়ে ছিনতাইকারী তকমা দিয়ে তাঁদের মারধর করা হয়।
এটি শুধু একটিমাত্র ঘটনা। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দলবদ্ধভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ পত্রপত্রিকায় ‘মব’ ও ‘মব জাস্টিস’ শব্দ দুটি আলোচনায় রয়েছে।
ইংরেজি শব্দ ‘মব’-এর অর্থ ‘বিশৃঙ্খল জনতা’। আর সরল ভাষায় এই বিশৃঙ্খল জনতা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে সহিংসতা করলে তাকে ‘মব জাস্টিস’ বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বলে।
আরও পড়ুন৬ মাসে পুলিশের ওপর ২২৫ হামলা, ‘মব’ নিয়ে উদ্বেগ০৭ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও আফ্রিকার দেশগুলোতে মব জাস্টিসের প্রবণতা বেশি। আফ্রিকার দেশ উগান্ডার বিচারব্যবস্থার উদ্যোগে পরিচালিত সরকারি প্রকল্প জাস্টিস সেন্টার্স উগান্ডার ওয়েবসাইটে ‘মব জাস্টিসের’ বিস্তারিত সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মব জাস্টিস হলো অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে কোনো ব্যক্তিকে অবমাননা, মারধর, হত্যা বা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বা প্রতিশোধ নেওয়া। এ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পান না। উচ্ছৃঙ্খল জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। মব জাস্টিসের মাধ্যমে কোনো ন্যায়বিচার হয় না। কারণ, এখানে সাক্ষী, বিচারক ও শাস্তিদাতা—সবকিছুর ভূমিকায় থাকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত বৈশ্বিক ঘোষণা অনুযায়ী, মব জাস্টিসের কারণে মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন হয়। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের অধীনে সবার সমতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার, তাঁকে যেন নিরপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত বৈশ্বিক ঘোষণা অনুযায়ী, মব জাস্টিসের কারণে মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন হয়। ঘোষণার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের অধীনে সবার সমতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর ঘোষণার ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার—তাঁকে যেন নিরপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) হিসাবে, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাত মাসে গণপিটুনিতে অন্তত ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৪ জন। আর গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মোট ৭৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। গত বছর এ ধরনের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন‘মব জাস্টিস’ পরিস্থিতি হলে এখন থেকে কঠোর হব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম০৯ মার্চ ২০২৫রুয়ান্ডা গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মব জ স ট স র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।