রোজার কাজা কাফফারা ফিদইয়া ও মানবিক বিধান
Published: 16th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাসের রোজা আল্লাহ তাআলার নিয়ামতে পরিপূর্ণ। বান্দা তা স্বাচ্ছন্দ্যে পালন করবে। কোনো কারণে সময়মতো পালন করতে না পারলে তা কাজা আদায় করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সিয়াম বা রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিন (এক মাস)। তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আর যাদের রোজা পালনের সক্ষমতা নেই, তারা এর পরিবর্তে ফিদইয়া দেবে (প্রতি রোজার জন্য) একজন মিসকিনকে (এক দিনের নিজের) খাবার (বা এর মূল্য) দেবে। অনন্তর যে ব্যক্তি অধিক দান করবে, তবে তা তার জন্য অতি উত্তম। আর যদি তোমরা পুনরায় রোজা পালন করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।
রোজা রেখে কোনো ওজর বা অসুবিধার কারণে ভেঙে ফেললে তা পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা পরবর্তী সময়ে সুবিধামতো সময়ে আদায় করা যায়, সব কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয়। রোজা রেখে ওজর ছাড়া কোনোরূপ শয়তানি ধোঁকায় বা নফসের তাড়নায় তা ভঙ্গ করলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়। একটি দাস মুক্ত করা; ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করানো, ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পালন করা।
কাফফারা ৬০টি রোজা একত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে রাখতে হয়। কারও যদি কাজা ও কাফফারাসহ মোট ৬১টি বা তারও বেশি হয়, তবে কমপক্ষে ৬০টি রোজা একটানা আদায় করতে হবেযে কয়টি রোজা (রাখার পর) ওজর ছাড়া ভাঙবে, ততটির প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে কাজা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হবে একই রমজান মাসের জন্য একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা মিলে হবে ৬১টি রোজা, ২টি ভাঙলে হবে ৬২টি রোজা, ৩টি ভাঙলে হবে ৬৩টি রোজা।
কাফফারা ৬০টি রোজা একত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে রাখতে হয়। কারও যদি কাজা ও কাফফারাসহ মোট ৬১টি বা তারও বেশি হয়, তবে কমপক্ষে ৬০টি রোজা একটানা আদায় করতে হবে। কাফফারার রোজার মাঝখানে বিরতি হলে বা ভাঙলে পুনরায় নতুন করে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। অর্থাৎ ৬০টি রোজা পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিরতি হলে পুনরায় নতুন করে এক থেকে শুরু করে আবার ৬০টি পূর্ণ করতে হবে। যে রোজাগুলো রাখা হলো, তা নফল হিসেবে পরিগণিত হবে। কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর বা আপদের কারণে ভাঙতে হলে তা ক্ষমাযোগ্য। নারীরা বিশেষ বিরতির সময় বাদ দিয়ে রোজা পালন করবেন।
শিশু নাবালেগ অবস্থায় (সাধারণত মেয়েদের ১১ বছরের পূর্বে এবং ছেলেদের ১৩ বছরের পূর্বে) রোজা রাখা ফরজ নয়, তবু তারা নিজেদের আগ্রহে ও বড়দের উৎসাহে রোজা রেখে থাকে। এ অবস্থায় তারা যদি রোজা রেখে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনোভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাদের এই রোজার কাজা বা কাফফারা—কোনোটিই প্রয়োজন হবে না। এরপরও যদি তারা বড়দের সঙ্গে কাজা রোজা রাখে, তাতেও বাধা নেই এবং কাজা রোজা রাখতে শুরু করে তা আবার ভেঙে ফেলে, তারও কাজা লাগবে না।
মানবতার মহান বন্ধু মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব আল ল হ র জন য বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।