সশস্ত্র সংগঠন গড়ে এক বছরেই আলোচনায় আসেন আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ
Published: 19th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ১০ জনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর মধ্যে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী (৪৮) রয়েছেন। তিনি ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তা এবং রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি।
সীমান্তের একাধিক সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়ায় আতাউল্লাহর বাড়ি। ১৯৬০ সালের দিকে তাঁর বাবা পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানেই জন্ম আতাউল্লাহর। তিনি পড়াশোনা করেন সৌদি আরবের মক্কায়।
২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তাঁর নাম শোনা যায়। তিনি ২০১৬ সালের দিকে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে তোলেন বলে মনে করা হয়। ওই বছরের অক্টোবরের শুরুতে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সে দেশের সীমান্তচৌকিতে হামলা চালান। তাতে দেশটির বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই সময় হামলার দায় স্বীকার করে আরসার কমান্ডার আতাউল্লাহ অনলাইনে ভিডিও বার্তা প্রচার করেন। এর পর থেকে আরসা ও আতাউল্লাহ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩০টি চৌকিতে হামলা হয়। ওই হামলার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে দায়ী করেছিল। সেই পটভূমিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। সেই সময় হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
আরও পড়ুনরোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার প্রধানসহ ১০ জন নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার২১ ঘণ্টা আগে২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান আতাউল্লাহ।বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে হত্যা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে আরসার সদস্যরা জড়িত বলে এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান আতাউল্লাহ।
এ ছাড়া আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি আতাউল্লাহ। তিনি ওই খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে আদালতের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ওই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার কুতুপালংয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০২২ সালের ১৩ জুন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এতে বলা হয়, আরসার প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে সংগঠনের ৩৬ সদস্য পরিকল্পিতভাবে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেন। বর্তমানে মামলাটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
আরও পড়ুনময়মনসিংহের ব্যস্ততম এলাকায় যেভাবে থাকতেন আরসা সদস্যরা৫ ঘণ্টা আগের্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সদ্য বদলি হওয়া অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, র্যাব গত এক বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী, সামরিক কমান্ডারসহ ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ৫৮ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৭৮টি দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, হ্যান্ড মাইন ও গুলি জব্দ করা হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করায় আতাউল্লাহসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ, র্যাব ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত সাড়ে ৭ বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন ২৫২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬৮টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬৭ রোহিঙ্গা নিহত হন। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ২৭ জন ও আরএসওর ৭ জন নিহত হন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি।
আরও পড়ুনআরসাপ্রধানকে গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে স্বস্তি, তবে শঙ্কা কাটেনি ৭ ঘণ্টা আগেগত সাড়ে ৭ বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন ২৫২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬৮টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬৭ রোহিঙ্গা নিহত হন।রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০১৮ সালের দিকে পুরো আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরসার হাতে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও আরসাকে নানাভাবে সহযোগিতা দিত। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে বিপাকে পড়ে আরসা। এর ফলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সমর্থন হারাতে থাকে তারা। এরপর আরসা আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছিল। আতাউল্লাহসহ আরসার কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের খবরে আশ্রয়শিবিরে থাকা আরসা সন্ত্রাসীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আরএসওসহ অন্য সন্ত্রাসীরা আরসার সন্ত্রাসীদের পালানো ঠেকাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাতে আশ্রয়শিবিরে নতুন করে সংঘাত-হানাহানি দেখা দিতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র আর ক ন সদস য স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
তাম্বুন পেরমাই থেকে বেগান সেরাই, এক দিনে ৮১ কিমি
গ্রামের ভেতরের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। রাস্তায় বাংলাদেশের পতাকা দেখে অনেক শ্রমিক ভাই আমাদের হাত উঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাল। মুনতাসীর ভাইয়ের সাইকেলের পেছনে লাঠির মাথায় বাঁধা বাংলাদেশের পতাকা। দেশের পতাকা আর নিজের দেশের লোক অনুমান করলে এই দূর দেশে যে কোন প্রবাসীর মনে ডাক দিবে। তাদের অনেক কৌতূহল আমাদের ব্যাপারে। বাংলাদেশ থেকে কেউ এখানে সাইকেল চালাতে আসতে পারে এমন কিছু তারা ভাবতেও পারেনি!
বেলা তিনটার মধ্যে গ্যালাক্সি হোটেল পেয়ে গেলাম। বেশ পরিপাটি সুন্দর। এখন আমরা তিনজন, এক রুমে সবাই। ভোরবেলায় বের হওয়ার সুবিধাটা এখন বোঝা গেলো! গরমে বেশি ক্লান্ত হবার আগেই হোটেলে ঢুকে চিল করা যাচ্ছে। বিশ্রাম আমাদের পরদিনের রসদ যোগাবে।
যথারীতি ভোরবেলাতেই বের হলাম। প্রতিদিন বের হওয়ার সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে কাটে। মালয়েশিয়াতে ওয়েদারের ঠিক-ঠিকানা নাই। এই ঝুম বৃষ্টি, আবার ফকফকা। আবার ভোরবেলা রাইড শুরু করতে হলে ঘুম থেকে উঠতে হয় আরো আগে। সব কিছু গুছিয়ে আবার সাইকেলে বাঁধো তারপর রওনা হও।
সকালের বেশ খানিকটা দূরত্ব অতিক্রম করে আসার পরে ‘নেবুঙ তাবাং’ নামে এক জায়গায় নাস্তার জন্য থামি। রাস্তার পাশেই খাবারের দোকান থেকে রোজ সকালে দুই পরোটা আর দুই ডিমে আমাদের প্রাতরাশ। খরচা বেশি নয়। তবে ডিম পোচটা একটু বুঝিয়ে দেওয়া লাগতো। আজকেও সেফকে বুঝিয়ে বলছিলাম, ইংরেজিতে তাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন দেখি বাঙালি এক ভাই আমাদের চিনতে পেরেছেন। সে এসে সহযোগিতা করল। তার নাম হাবিব, বাড়ি নওগাঁ। কয়েক বছর হলো এখানে কাজ করছে। কুয়ালালামপুর থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশীরা কাজের জন্য এসেছে। সবারই ভিন্ন ভিন্ন গল্প।
দেশী মানুষের দেখা পেলাম প্রায় সব জায়গাতেই। সাইকেল চালাতে কেউ এত দূর পর্যন্ত চলে আসতে পারে তাদের মাথায় এটা ধরতেই চায় না। আর খাবারের ব্যাপারে বলতে গেলে বাংলাদেশীরা যে দেশেই যাক ভাত-মাছ মসলা দিয়ে মাংস এগুলো খোঁজে। মালয়েশিয়ান খাবারেও নানা বেচিত্র্য আছে। ঐতিহাসিক অভিবাসন, বিদেশী শক্তির উপনিবেশ স্থাপন এবং তার বৃহত্তর স্বদেশের মধ্যে এর ভৌগোলিক অবস্থানের ফলে, বর্তমান সময়ে মালয়েশিয়ার রন্ধনশৈলী মূলত মালয়, চীনা, ভারতীয়, ইন্দোনেশিয়ান, থাই, ফিলিপিনো এবং আদিবাসী বোর্নিয়ান এবং ওরাং আসলির ঐতিহ্যের মিশ্রণ, যার মধ্যে আরব, থাই, পর্তুগিজ, ডাচ এবং ব্রিটিশ রন্ধনপ্রণালীর হালকা থেকে তীব্র প্রভাব রয়েছে। তবে মালয়েশিয়ানদের আমাদের মতো প্রধান খাদ্য হলো ভাত। বিদেশে এলাম একটু নতুন জিনিস ট্রাই করবো, এখানেও ভাত খেলে কি চলে! কিন্তু কিছুদিন পর সেই ভাতই খেতে মন চায়- কি জ্বালা!
নাস্তা শেষ করতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। পথের পাশে আম গাছ থেকে কয়েকটা আম পেড়েছিলাম। নাস্তা করে সেগুলো লবণ দিয়ে খেতে বসলাম। বাকি পথ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলতে হলো। ৪৭ কিলোমিটার চালিয়ে ‘বেগান সেরাই’তে চলে এলাম। আজকে থাকবো হোটেল কুলান ইন। মুসলিম হোটেল, খুব পরিপাটি সুন্দর। পাশেই একটা পাকিস্তানি রেস্তরাঁ- বিসত্রো জালেল। পেট ভরে ভাত মাছ মুরগি শাক-সবজি খেলাম। রাতে খেলাম সুপ। হোটেলের পেছনে একটা পেঁপে গাছ ছিল, পাখি পাকা পেঁপে খেয়ে খেয়ে বেশুমার। এরা গাছের ফল ছেড়ে না মনে হয়, আম গাছেও এত আম কেউ মনে হয় দেখেই না। একজনকে বলতেই বিশাল এক পেঁপে পেড়ে দিলো। সুইচ আর্মি নাইফটা দিয়ে কেটে কেটে খেয়ে আমরাও বেশুমার হলাম। কড়া মিষ্টি। মন তৃপ্ত হলো। সকাল থেকে বৃষ্টির পর সুন্দর রোদ উঠেছে। জামাকাপড় ধুয়ে শুকাতে দিলাম। এখন শুধু রিলাক্স।
পরদিন ভোর ৫টা ১০-এ শুরু করলাম। ভরের আলো ফোটার আগেই ১৫ কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেছি, এরপর ২৭ কিলোমিটার পরে নাস্তার জন্য থামলাম। আজকের পথটা বেশ সুন্দর। অনেক গাছগাছালি আছে পথে। নাস্তার সময় একজন মালয় সাইক্লিস্টের সঙ্গে পরিচয় হলো, তিনি আমাদের সাইকেলের সাথে ব্যাগবোচকা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি আর সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা। তারাও মালয়েশিয়াতে দল বেঁধে বিভিন্ন রুটে সাইকেল চালায়। আমাদের রুট সম্পর্কে জানতে চাইলে ম্যাপে দেখালাম। তিনি সহজ একটা রাস্তার কথা বললেন, তবে আমরা অপেক্ষাকৃত কম ট্রাফিক আছে এমন রুট বেছে নিলাম। এখানে মেইন রোডের সঙ্গে প্যারালালি গ্রামের রাস্তার মতো ছোট রাস্তা চলে গেছে। তারপর অনেক দূরে দূরে গিয়ে আবার সেই মেইন রোডের সঙ্গে মিলেছে। সুবিধা হলো সাইকেলের সঙ্গে বড় গাড়ির সংযোগ হচ্ছে না এবং গাছগাছালির ছায়া পাওয়া যাচ্ছে। মালয়েশিয়াতে পাম গাছের আধিক্য অনেক এবং মূল দেশীয় উপার্জনের একটা বড় অংশ আসে সয়াবিন ও পাম থেকে। দুই-ই তেলবীজ। তবে তেলের দাম কম বলে মনে হলো না। ১ লিটার তেলের দাম ২৪০ টাকারও বেশি। এর কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না।
একটা সরু রাস্তায় উঠলাম একপাশে লম্বা ক্যানেল চলে গেছে, আর দুপাশে নানা ফলফলাদির গাছ। একটা কলাগাছে কলা পেকে আছে, ছিড়ে নিলাম কিছু। পেঁপে গাছে পাকা পেঁপে ঝুলে আছে নিলাম একটা। বড় বড় কাঁচা আম রাস্তার থেকে হাত দিলেই ছোঁয়া যায় তাও নিলাম। সাইকেলে এমনিতেই জিনিসপত্র বোঝাই করা, তার মধ্যে আর বেশি কিছু নেবার সুযোগ নেই। ফ্রেস জিনিস পথে বসে খাবো বলে সঙ্গে নিলাম। এখানে বাড়িঘরগুলো বেশি উঁচু না। একতলা বড়জোড় দোতলা। ভারত শ্রীলঙ্কাতে যেমন বাড়ির প্যাটার্ন হয় তেমন ধরনের বাড়ি দেখলাম এই অঞ্চলে। শহরের দিকে উঁচু দালানে ভরপুর। আরেক রাস্তায় উঠে একটা নারকেল গাছের বাগান দেখতে পেলাম। রাস্তার ধারেই সারি করে গাছ এবং মজার জিনিস হলো গাছগুলো এক মানুষ সমান। তাও আবার বোদকা বোদকা হলুদ ডাব। এমনভাবে ড্যাবড্যাব করে ডাবগুলো আমাদের দিকে চেয়ে আছে যে খুব লোভ হলো এবং জল তেষ্টাও পেলো। ততক্ষণে গগন তেঁতে উঠেছে।
চঞ্চলকে বললাম- এই দাঁড়া, চট করে ডাবের জল খেয়ে নেই। আশেপাশে এমন কাউকে দেখছিও না যার কাছে অনুমতি নিতে পারি। আবার পথে এতো বার বিরতি দিলে এই তেঁতে ওঠা আবহাওয়াতেই বেশিক্ষণ চালাতে হবে, তাই মুনতাসীর ভাইও তেমন একটা থামতে চায় না। সাইকেল সাইড করে বড়সড় একটা ডাব কান্ড থেকে মুচড়ে মুচড়ে আলাদা করলাম, এরপর কচি ডাবের গায়ে ছুরি চালিয়ে দিলাম আর ফিনকি দিয়ে ডাবের জল চোখ-মুখ ভিজিয়ে দিলো। মিষ্টি জলের স্বাদ পেলাম। চারকোনা করে কেটে একটা মুখ বানালাম এরপর ঢকঢক করে গিলে নিলাম। পরেরটা মিস ফায়ার, জল নেই। আরো কয়েকটা পেড়ে চঞ্চল আর মুনতাসিরকে দিলাম। মন ভরে উঠল। সারভাইভাল টেকনিক স্কিলও ঝালাই হলো। অন্যদিন পথের ধারে দোকানে ডাব খেয়েছিলাম ১৫ রিঙ্গিত দিয়ে, কি সুন্দর করে কেটে ডাবের পানি প্রথমে বড় সাইজের মগে নিলো, তাতে সুগার সিরাপ দিলো, আইস দিলো এবং ডাবের নরম শাঁস কুড়িয়ে সেই পানিতে ছেড়ে দিলো- কলিজা ঠান্ডা!
আরেকটা বড় রাস্তায় ওঠার পর এক এলাহী কাণ্ড দেখলাম। মটরবাইকের বহর যাচ্ছে, সামনে মালয় পুলিশের বাইকও রয়েছে বেশ কিছু। যেমন আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতারা কোথাও গেলে শোডাউন করে তেমন। আমরাও এমন কিছুই মনে করেছিলাম, ভিভিআইপি কেউ যাচ্ছে পেছনে মটরবাইকের বহর। স্পিড কমে হলেও ১২০ কিলোমিটার হবে। সেই বহর যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, বিশ পঞ্চাশ একশ, দুইশো, চারশ পাঁচশ আরো বেশি হবে অনুমান করি। এ কি দেখলাম বাবা এক ঝলক! আমাদের রীতিমত পথের পাশে সাইড করে থামিয়ে দেওয়া হলো, বিপরীত পথের গাড়িগুলোকেও। পুরো রাস্তায় বাইক শুধু। কত মডেলের যে মটরবাইক এবং স্কুটি দেখলাম! ভাবলাম এতো জোরে জোরে যে চালাচ্ছে, একটা এদিক সেদিক হলে পেছনের গুলাও অক্কা পাবে নির্ঘাত। পরে লোক মুখে শুনলাম ছুটির দিনে বাইকার গ্রুপগুলো এমন দলবেঁধে লং ড্রাইভে বের হয়। পুলিশ তাদের রাস্তা খালি করার জন্য প্রটেকশন দেয়। এলাহি কারবার! সত্যিই বিদেশ বিভূঁইয়ে কত কিছু দেখার এবং জানার সৌভাগ্য হয়। এ জন্য ধর্মেও বলেছে ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যাও’।
বেলা ৩টার মধ্যে আমরা হোটেল লাম সেং-এ উঠে গেলাম। এই পাড়াটা চাইনিজ অধ্যুষিত। হোটেলের উল্টা পাশে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে হলো আরেক বিপত্তি। এরা ইংরেজি কেউ বোঝে না। গুগলে ইংরেজি লিখে তার চাইনিজ তর্জমা করে আকারে ইঙ্গিতে দেখিয়ে এই বেলায় কিছু খাওয়া গেলো। সন্ধ্যায় অবশ্য অন্য এক চাইনিজ রেস্তোরাঁতে আমাদের খাবারের অর্ডার ঠিক ঠিক নিতে পেরেছিল। খাবারগুলো বেশ মজার। কালামারি ফ্রাই, কোয়েতাও সুপ, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, চিল্ড বিয়ার। সব মিলিয়ে আজকে ৮১ কিলোমিটার চালানো হলো।
তারা//