তৌহিদী জনতার নামে ‘মব’ তৈরি করে একদিকে মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে নানা ট্যাগ দিয়ে বামপন্থীদের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বামপন্থীরা অন্যায়ের  বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিক্ষোভ–সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ধর্ষণ-নারী নির্যাতন ও পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস বন্ধ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান এবং অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আজ যারা উপদেষ্টা পর্যায়ে বসে আছেন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠরাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে ছিলেন না। গত ১৫ বছর যারা লড়াই সংগ্রামের সাথে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেই আজ কথা বলা হচ্ছে। বামদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারও বামদের প্রতি নাক সিটকানো মনোভাব পোষণ করেন বলে অভিযোগ করেন ইকবাল কবির। এই অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা মার্কিন ও পুঁজিবাদী অর্থনীতি পক্ষ নেবে বলে বামপন্থীদের চাপে রাখা হয়েছে।

দেশে চলমান খুন, ধর্ষণ ও হয়রানি–নির্যাতন ঘিরে গড়ে ওঠা ‘নৈরাজ্যকে’ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন বাম জোটের সমন্বয়ক। অপরাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, কালক্ষেপণ না করে এই মুহূর্তে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষার জন্য, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।

তৌহিদি জনতা  কারা– এ প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কিছু লোক নানাভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের চেষ্টা করছে। নারীদেরকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। তার পরেও সরকার অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনছে না।

‘বরং আমার দেখছি, যারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমেছেন, বিশেষ করে শিক্ষক-শ্রমিকদের ওপর অযাচিত দমন–পীড়ন চালিয়েছে সরকারি বাহিনী। বলতে হচ্ছে বর্তমান সরকার ২৪ এর গণ-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারছেন না,’ বলেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মোশরেফা মিশু আরও বলেন, ‘মব সন্ত্রাস দিয়ে সিপিবির অফিস হামলার হুমকি আমরা শুনেছি।’ এভাবে সিপিবির কন্ঠ অবরোধ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থান ৩৬ দিনে হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এ সংগ্রাম চলমান। ২০১৪ সালের আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি, ২০১৮ তে সরকাকে ফ্যাসিস্ট সরকার বলেছি, ২০২৪–এর ডামি নির্বাচনের পর মাঠে নেমে সংগ্রাম করেছি। আমরা বলেছি, গণ–অভ্যুত্থান ছাড়া এই সরকার নামানো সম্ভব না। ২ আগস্টে আমরা দ্রোহ যাত্রা করেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের ট্যাগিং করা হচ্ছে।’

ঈদ সামনে রেখে ২০ মার্চের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ এবং ২৫ মার্চের মধ্যে বোনাস দেওয়ার আহ্বান জানান মোশরেফা মিশু। ‘যদি সেটা না মানা হয়, শ্রমিকরা মাঠে নামবে। তার দায় সরকার ও শ্রম উপদেষ্টাকে নিতে হবে,’ বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির আহ্বায়ক আব্দুল আলী। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম গণত ন ত র ক ব মপন থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’

মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ