একদিকে চলছে ‘মব’ সন্ত্রাস, অন্যদিকে বামপন্থীদের নামে অপপ্রচার
Published: 19th, March 2025 GMT
তৌহিদী জনতার নামে ‘মব’ তৈরি করে একদিকে মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে নানা ট্যাগ দিয়ে বামপন্থীদের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বামপন্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিক্ষোভ–সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ধর্ষণ-নারী নির্যাতন ও পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস বন্ধ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান এবং অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আজ যারা উপদেষ্টা পর্যায়ে বসে আছেন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠরাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে ছিলেন না। গত ১৫ বছর যারা লড়াই সংগ্রামের সাথে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেই আজ কথা বলা হচ্ছে। বামদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারও বামদের প্রতি নাক সিটকানো মনোভাব পোষণ করেন বলে অভিযোগ করেন ইকবাল কবির। এই অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা মার্কিন ও পুঁজিবাদী অর্থনীতি পক্ষ নেবে বলে বামপন্থীদের চাপে রাখা হয়েছে।
দেশে চলমান খুন, ধর্ষণ ও হয়রানি–নির্যাতন ঘিরে গড়ে ওঠা ‘নৈরাজ্যকে’ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন বাম জোটের সমন্বয়ক। অপরাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, কালক্ষেপণ না করে এই মুহূর্তে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষার জন্য, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।
তৌহিদি জনতা কারা– এ প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কিছু লোক নানাভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের চেষ্টা করছে। নারীদেরকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। তার পরেও সরকার অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনছে না।
‘বরং আমার দেখছি, যারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমেছেন, বিশেষ করে শিক্ষক-শ্রমিকদের ওপর অযাচিত দমন–পীড়ন চালিয়েছে সরকারি বাহিনী। বলতে হচ্ছে বর্তমান সরকার ২৪ এর গণ-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারছেন না,’ বলেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মোশরেফা মিশু আরও বলেন, ‘মব সন্ত্রাস দিয়ে সিপিবির অফিস হামলার হুমকি আমরা শুনেছি।’ এভাবে সিপিবির কন্ঠ অবরোধ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থান ৩৬ দিনে হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এ সংগ্রাম চলমান। ২০১৪ সালের আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি, ২০১৮ তে সরকাকে ফ্যাসিস্ট সরকার বলেছি, ২০২৪–এর ডামি নির্বাচনের পর মাঠে নেমে সংগ্রাম করেছি। আমরা বলেছি, গণ–অভ্যুত্থান ছাড়া এই সরকার নামানো সম্ভব না। ২ আগস্টে আমরা দ্রোহ যাত্রা করেছিলাম। কিন্তু আজ আমাদের ট্যাগিং করা হচ্ছে।’
ঈদ সামনে রেখে ২০ মার্চের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ এবং ২৫ মার্চের মধ্যে বোনাস দেওয়ার আহ্বান জানান মোশরেফা মিশু। ‘যদি সেটা না মানা হয়, শ্রমিকরা মাঠে নামবে। তার দায় সরকার ও শ্রম উপদেষ্টাকে নিতে হবে,’ বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির আহ্বায়ক আব্দুল আলী। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম গণত ন ত র ক ব মপন থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।