বরিশালের বাবুগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবার ও আহতরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আহত শিক্ষার্থীকে বাদী বানিয়ে মামলা করে আসামিদের কাছ থেকে আদায় হচ্ছে টাকা। অথচ সেই শিক্ষার্থী জানেন না মামলার খবর। 
গতকাল বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত পরিবার এবং আহতদের মাঝে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন উপজেলার পূর্ব রহমতপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের মেয়ে সুমনা পারভীন অন্তু। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সুমনা গণঅভ্যুত্থানে একজন আহত যোদ্ধা। তিনি এখন পঙ্গু। তিনি বলেন, গত ১৬ জুলাই তিনি ঢাকায় আন্দোলনে অংশ নিলে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে বরিশালে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে দেখেন তাঁর নামে বরাদ্দ বিএম কলেজ হোস্টেলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তিনি এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলামের উস্কানি এবং উপস্থিতিতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন বিএম কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, লক্ষ্মী মজুমদার, অনামিকা সিকদার, কাজী ইসরাত জাহান, সুবর্ণা আক্তার ও সাথী। এ সময় জহিরুলের নির্দেশে তাঁকে বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে রাতভর আটকে রাখেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। পরদিন তাঁকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সুমনা গত বছর ১৮ নভেম্বর বরিশালের আদালতে মামলা করেন। মামলাটি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট পক্ষে নিয়ে আদালতে খারিজ করান জহিরুল–অভিযোগ সুমনার। 
সুমনা বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বরিশাল সিটির সাবেক দুই মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ১৪০ জনকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী বানানো হয় তাঁকে। অথচ তিনি এ মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ওই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সেই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকেই সুমনা জেনেছেন তিনি এই মামলার বাদী। অথচ তিনি কখনো থানায় যাননি কিংবা কোনো কাগজে সই করেননি। তাঁকে পুঁজি করে মামলাবাণিজ্য চালাচ্ছে একটি চক্র। এদিকে তিনি দিন কাটাচ্ছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। খুন-গুম কিংবা ধর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থানায় একটি জিডিও করেছেন। সুমনা উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। 
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে হোস্টেল থেকে সুমনাকে বের করে দেওয়া হয়। হোস্টেলের ছাত্রীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে বলে শুনেছেন। তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয়েছিল কিনা তা তাঁর জানা নেই। এ জন্য সুমনা নাকি আদালতে মামলাও করেছিল। তবে সেটাও তিনি সঠিক জানেন না বলে দাবি করেন।
মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন বন্ধ করে দেন।
সুমনার মতো একই দাবি করেছেন নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবাসহ বেশ কয়েকজন আহত ছাত্র। ইউএনও ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাবুগঞ্জ উপজেলার নিহত তিন পরিবার এবং আহত ২০ জনকে অনুদানের চেক দেওয়া হয়। 
১৬ জুলাই চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন এমইএস ওমরগণি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত। ফয়সালের বাবা উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের ফার্নিচার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। অথচ সেই স্বাধীন দেশে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নাই। আমরা এখন চোরের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ফিরে এসে নাকি আমাদের দেশদ্রোহী বানিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখবে। লাশ দাফন করতেও দেবে না। এমন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ 
সুমনাকে বাদী বানিয়ে মামলার প্রসঙ্গে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, কোন ঘটনায় কোন মামলা হয়েছে এবং কে তার বাদী সেটা মামলা নম্বর ছাড়া বলা সম্ভব নয়। আমি যোগদানের পরে কোতোয়ালি থানায় সুমনা পারভীন অন্তু নামে কোনো বাদী মামলা করেননি। বিষয়টি যেহেতু তাঁর জানা নেই, তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না।
বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, যে অভিযোগগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন কল জ র বর শ ল পর ব র আহম দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩