ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নবাসী। বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দ্রুত মেরামত বা পুনঃ নির্মাণের দাবি তাদের।  

সেতুটি ছোট কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ। যেটি সংযোগ করেছে উপজেলা সদরের সাথে একটি পুরো ইউনিয়নের। সেতুটির দুইপাশের সংযোগ সড়কের ধারক দেয়াল ধসে মাটি সরে গিয়ে মহালছড়ি উপজেলার সাথে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়েছে বিগত বন্যায়। এখন সেতুটি কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। যে কোন মুহূর্তে ধসে যেতে পারে। এটি দিয়ে এখনই চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত। 

সেতুটির অবস্থান মহালছড়ি উপজেলার মহালছড়ি থেকে সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া এলাকায়। সেতুটি দুর্দশায় পড়েছে প্রায় ১০/১২ বছর আগে। জোড়াতালি দিয়ে মানুষজন ও পরিবহন চলাচল করছিল। এ অবস্থায় বিগত বন্যায় সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ও মাটি সরে যাওয়ার পর এলাকাবাসীরা নিজেদের উত্তোলিত টাকায় বাঁশ আর কাঠ দিয়ে মেরামত করে কোনমতে চলাচল করছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুঘর্টনা। 

অবশ্য বড় ধরনের বা পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে খাগড়াছড়ি এলজিইডি বিকল্প সড়ক তৈরি করলেও মানুষ চলাচল করছে পুরাতন সেতু দিয়েই।  

মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ির ঝুঁকিপূর্ণ সেতু

এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী মেশিন পাড়ার সুগত চাকমা, করল্যালচি গ্রামে কুন্ডল চাকমা, সিঙ্গিনালা গ্রামে হ্লাথোয়াই কারবারি ও মনাটেক গ্রামের সূর্য চাকমা- এরা জানান, সেতুটি আগামী বর্ষা বা কাপ্তাই বাঁধে পানি আসার আগে মেরামত বা নতুনভাবে না করলে একেবারে বন্ধ হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কারণ, কাপ্তাই বাঁধে পানি চলে এলে বিকল্প সড়কটিও ডুবে যাবে। 

মুবাছড়ি  ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের এটি একমাত্র সড়ক। এই সড়ক দিয়ে সকল বাজার, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়াসহ উৎপাদিত সকল কৃষিপণ্য বাজারজাত ও আনা-নেওয়া করা হয়।

দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর বা তারও আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র অর্থায়নে এই সড়কটি নির্মাণের সময় করা হয়েছিল এই ছোট সেতুটিও।  এই সড়ক দিয়ে শুধু মুবাছড়ি ইউনিয়নের লোকজন নয়, রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা করল্যাছড়ি, সেলোন্যা, সাবেক্ষংসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজারের মতো লোকজন চলাচল ও পণ্য আনা-নেওয়া করে। 

খাগড়াছড়ির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, “বিগত বন্যায় ব্রিজটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। এটি আগে থেকে সার্ভে ছিল। এরপর ব্রিজটি অনুমোদন হয়ে আসছে তবে কিছু ত্রুটি ছিলো। মূলত হাইসপাড় লেভেলটা কম থাকায় আবার সংশোধনের জন্য পাঠিয়েছেন। এটি সংশোধন হয়ে গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে এটি পেয়ে যাবেন। পেয়ে গেলে বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু করতে পারবেন। আর তারা চেষ্টা করবেন যাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।” 

ঢাকা/রূপায়ন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ম র মত

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আঁধার কাটেনি কোচদের

বন্যহাতি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে কোচ সম্প্রদায়। তাদের কেউ কেউ দিনমজুরি, বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ, বাঁশ দিয়ে ডোল, ধারাই ও চাটাই তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ নিজেদের লাগানো কাসাবা খেয়ে বেঁচে থাকেন। অভাব-অনটনে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করলেও তাদের দিকে বিশেষ নজর নেই কারও। অবহেলিত এ আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস নালিতাবাড়ী উপজেলার খলচান্দা গ্রামে। সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০।
বারমারী বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে খলচান্দা গ্রামে যেতে হয়। প্রায় ১০০ গজ উত্তরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। স্বাধীনতার আগে মাত্র চার ঘর কোচ এই গ্রামে বাস করত। এর পর বংশবৃদ্ধি এবং ১৯৭৬ সালে চৌকিদার টিলা গ্রামে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও পরে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প করায় আন্ধারুপাড়া গ্রাম থেকে বেশ কিছু পরিবার এখানে এসে বসতি গড়ে। এই গ্রামের বর্তমান পরিবার সংখ্যা প্রায় ৫২ ঘর। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ এ গ্রামে যেতে চান না।  টিলায় ঘেরা গ্রামে দিনদিন জনসংখ্যা বাড়লেও তাদের ভাগ্যের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা চেল্লাখালী নদী দিয়ে এক সময় ভারত থেকে ভেসে আসত অসংখ্য বড় মূল্যবান গাছ। সে গাছ নদী থেকে তুলে এনে বিক্রি করে এবং পাহাড়ের সমতল জমিতে ধান চাষ করে ভালোই চলত খলচন্দা গ্রামের কোচদের সংসার। এসব দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। তাদের মূল পেশা কৃষিকাজ হলেও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ায় জমি সংকট এবং কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই সেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিনমজুর, কেউবা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নানা পেশায় যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।
গ্রামটিতে কোনো পাকা সড়ক নেই। যাতায়াতের সড়কটি বেহাল। শুষ্ক মৌসুমে সড়ক ধুলোময় হয়ে থাকে। বর্ষায় চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে যায়। এ ছাড়া গ্রামে একটি মাত্র প্রাকপ্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার হার নাজুক। স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও একই। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পায় না কোচ পরিবারগুলো। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে বারোমারি খ্রিষ্টান পল্লীর দাতব্য হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়। মুমূর্ষু রোগীকে ডাক্তার দেখাতে বা চিকিৎসা নিতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদরে অথবা ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায়নি খলচান্দা গ্রামে। আজও আঁধার কাটেনি কোচদের– এমনটিই বলছেন স্থানীয়রা। 
খলচান্দা গ্রামের মায়াদেবী কোচ বলেন, ‘আমগর সড়কটা দিয়ে শান্তি মতো যাওন যায় না। আধা মাইল দূর থাইকা দুই বেলা পানি আইনা চলি। এতে আমগর বিরাট কষ্ট অয়। মেঘ (বৃষ্টি) অইলে সড়কা দিয়া হাঁটন যায় না। সরকার যদি আমগরে গ্রামে বেশ কয়ডা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা কইরা দিত, বিরাট উপকার অইত।’
বৃদ্ধ রুক্কিনী কোচ জানান, তাঁর বাবার বাড়ি পাশের সমেশ্চুরা গ্রামে। দেশ স্বাধীনের আগে এই গ্রামে বিয়ে হয় তাঁর। এক সময় পাহাড় আর জঙ্গলে ভরা ছিল। পাহাড় থেকে মরা কাঠ সংগ্রহ আর গাছ থেকে বিভিন্ন ফল পেড়ে খেতেন তারা। অনেক পশুপাখিও ছিল, কিন্তু এখন এই পাহাড়ে আর আগের মতো গাছও নেই, তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রামের রমেশ কোচ ও পরমেশ্বর কোচের ভাষ্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের গ্রামের মাত্র তিনজন কোচ সরকারি চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে বিজিবিতে কর্মরত একজন অনেক আগে মারা গেছেন। অভাব-অনটন আর যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এই গ্রামের কোচ উপজাতিরা শিক্ষায় এগোতে পারছেন না।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মাঝে মধ্যেই বন্যহাতি হানা দেয় এই গ্রামে। গাছের কাঁঠাল ও ক্ষেতের ধান পাকার মৌসুমে বন্যহাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় হাতির পাল কাঁঠাল, ক্ষেতের ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। বাড়িঘরও ভেঙে তছনছ করে ফেলে। তখন এই অসহায় কোচদের টিন পিটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে, ডাকচিৎকার ও হৈহুল্লোড় করে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। তাদের ভালো-মন্দের খবর কেউ রাখে না। জনপ্রতিনিধিরা শুধু নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে আসেন। তাদের পদচারণায় কোচপল্লী তখন মুখর হলেও নির্বাচনের পর তাদের খবর রাখে না কেউ।
স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, খলচান্দার কোচপাড়া যাওয়ার রাস্তাটার জন্যই অনেক পিছিয়ে আছে কোচ সম্প্রদায়ের লোকগুলো। বিশেষ করে অনিরাপদ রাস্তার জন্য শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত তারা। রাস্তা ও স্কুলের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ কিলোমিটার সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ
  • আজও আঁধার কাটেনি কোচদের
  • ফুটপাত দখল করে ঘেরের বাঁধ আ.লীগ ও জামায়াত নেতার