সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুন লেগেছে। আজ শনিবার সকালে বনের টেপারবিল এলাকা থেকে প্রথমে ধোঁয়া উঠতে দেখেন বন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। বন বিভাগও দুপুরে আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাঁরা অগ্নিনির্বাপণে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বনকর্মীরা। বনের ভেতরে খাল থেকে আগুন লাগার ওই এলাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় পানির উৎস পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন যেন বনের ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়াতে না পারে, সে জন্য আগুনের চার পাশে ফায়ার লাইন কাটা শুরু করেছেন বনরক্ষীরা।

ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশনের কর্মকর্তা আবতাদ ই আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়া এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। রামপাল ও কচুয়া থেকে তাঁদের আরও দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

সুন্দরবন-সংলগ্ন ধানসাগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য পান্না মিয়া বলেন, আজ সকালে সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকার বনের মধ্যে আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। বনজীবীরাও সেখানে আগুন লাগার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। বিষয়টি ধানসাগর স্টেশনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কর্মকর্তা ফরেস্টার বিপুলেশ্বর দাস বলেন, আশপাশে পানির কোনো উৎস নেই। বনের খাল থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে গহিন বনের মধ্যে আগুন জ্বলছে। খালে জোয়ার হলে নৌপথে পানির পাম্প নেওয়া হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়টি জেনেছি। ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। সেখানে পৌঁছানোর পর আগুনের কী অবস্থা সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

আরও পড়ুনসুন্দরবনে ২২ বছরে ২৫ বার আগুন০৫ মে ২০২৪আরও পড়ুনসুন্দরবনে আগুন নেভেনি, রাতে আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে ০৪ মে ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত স ন দরবন বন ব ভ গ এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা