চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিরোধ গড়িয়েছে সংঘাতেও। গত বুধবার এক দিনেই দলের দুটি অংশের মধ্যে সংঘর্ষ-হানাহানিতে একজনের প্রাণহানি এবং অন্তত ১৩ জনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা বিএনপির বিবদমান দুটি পক্ষের একটিতে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। অন্য পক্ষটিতে উত্তর জেলার আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের অনুসারীরা রয়েছেন।

২৪ মার্চ মিরসরাই উপজেলা এবং বারিয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে। সদস্যসচিব মনোনীত হন আজিজুর রহমান চৌধুরী। ৮৩ সদস্যের নতুন কমিটির নেতৃত্বে থাকা এই দুজনই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

কমিটিতে নিজেদের পক্ষের প্রতিনিধিত্ব কম থাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কমিটি গঠনের প্রতিবাদে ২৫ মার্চ দলের এই অংশের নেতা-কর্মীরা মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সুবিধাবাদী, চাকরিজীবী ও আওয়ামী লীগের সহযোগীদের পদে রেখে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। নতুন কমিটিকে সবখানে প্রতিরোধের ঘোষণাও দেন তাঁরা।

পদবঞ্চিত দাবিদার অংশটির বিক্ষোভের মুখে সংঘাতের আশঙ্কায় ২৬ মার্চ উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। তবে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভার জামালপুর এলাকায় দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন বিএনপির অন্তত ১৩ জন নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর এখনো এলাকায় আতঙ্ক কাটেনি। দুই পক্ষের সংঘাতের শঙ্কা রয়ে গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনের পর বিএনপির এই দুটি পক্ষের বিরোধ তীব্র হলেও তা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। ২০০৯ সালে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন নুরুল আমিন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এই কমিটি গঠনের ছয় মাস না যেতেই সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। দুজনকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। ২০১০ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকা নুরুল আমিনের পক্ষের একটি ইফতার মাহফিলে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলার জন্য তখনকার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের লোকজনকে দায়ী করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে খালেদা জিয়ার রোড মার্চে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে না পারাসহ নানা ব্যর্থতায় ২০১২ সালে উপজেলা বিএনপির এ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনকে বহিষ্কার করে দল, যদিও ১৫ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আবারও তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তিনি। সে বছরই আওয়ামী লীগ সরকার নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তাঁকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কার করে।

২০১৪ সালে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি করা হয়। সেখানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান আগের কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন। সদস্যসচিব করা হয় সালাউদ্দিন সেলিমকে। এরপর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ শাহীদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও গাজী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। ১৮ মার্চ বিএনপির চট্টগ্রাম জেলা পুনর্গঠন কমিটির সিদ্ধান্তে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ২৪ মার্চ নতুন কমিটি হয়েছে। তবে নতুন কমিটির বেশির ভাগ পদে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের অনুসারীরা থাকায় প্রতিরোধের ঘোষণা দেন প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা।

মহাসড়ক বন্ধ করে উপজেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা। গত বুধবার উপজেলা সদরের মিরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রসর ই উপজ ল ন ন র ল আম ন স ব ক উপজ ল ব য ক কম ট ব এনপ র স কম ট র কর ম র সদস য গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ