থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার সন্ধ্যা নামছে, কয়েক শ উদ্ধারকর্মী মরিয়া হয়ে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ৩০ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের খোঁজ করছেন।

শক্তিশালী ভূমিকম্পে সুউচ্চ ওই ভবন ধসে পড়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক শ্রমিক চাপা পড়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন।

সামান্য দূরে একটি সেতুর ওপর একদল সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছেন, মাথার ওপর আকাশজুড়ে কমলা আভা ছড়িয়ে আছে। ভবনটি ধসে তিনতলার সমান উঁচু ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে।

সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের দলে বিবিসির একজন প্রতিনিধিও ছিলেন। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে প্যাঁচানো তার আর ধাতব জিনিসপত্র বেরিয়ে আছে।

উদ্ধার অভিযান চালাতে ঘটনাস্থলে পেশাদার উদ্ধারকর্মীরা ছাড়াও সামরিক দল এসে পৌঁছেছে, স্থাপন করা হয়েছে ফ্লাডলাইট। তবু ধ্বংসস্তূপের নিচে খুব বেশি জীবিত মানুষ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বলে বিবিসির প্রতিনিধির মনে হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আশপাশের সাত দেশও কেঁপে ওঠে। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ে এবং সড়কে ফাটল ও ধস নামে। প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী পরাঘাত অনুভূত হয়।

সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও ব্যাপক কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কীভাবে সাড়া দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিবিসির প্রতিনিধি বলেন, যখন ভূমিকম্প শুরু হয়, তখন তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। অতীতে কখনো এমন কম্পন অনুভব করেননি তিনি।

তিন বছর ধরে ব্যাংককের ওই ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। সেটি নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি থাই বাথ (৫ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার) ব্যয় হয়েছে।

ধসে পড়া ভবনটির ধ্বংসস্তূপে এখনো ৮১ জন চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম উইচাচাই সাংবাদিকদের তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিবিসির প্রতিনিধি দুটি মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেখেছেন।

ধসে পড়া ভবনের পাশের সড়কটি ফায়ার ইঞ্জিন, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য উদ্ধারকারী যানবাহন দিয়ে ভর্তি হয়ে আছে। কৌতূহলী অনেকে সেতুর ওপর জটলা করে আছেন, কী ঘটছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করছেন।

উদ্ধারকাজের জন্য ঘটনাস্থলে অনেক ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। এর মধ্যে বিশাল আকারের একটি ক্রেনও আছে। উদ্ধারকারীরা বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ শুরু করার আগে ধ্বংসাবশেষ সরানো প্রয়োজন।

৩০ তলা ভবনটি ধসে পড়ার এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে বিবিসির প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে ধুলাবালুতে ঢাকা পড়া হতবিহ্বল নির্মাণ শ্রমিকদের দেখতে পান তিনি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে এইমাত্র বেঁচে যাওয়ার বিষয়টি যেন তাঁরা বুঝতেই পারছেন না।

ব্যাংককে ধসে পড়া ভবনের সামনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে নিখোঁজ শ্রমিকদের বন্ধু ও স্বজনদের অপেক্ষা। ২৯ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র ওপর ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

দশমিনায় ভবন নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে খসে পড়ছে পলেস্তারা

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার একটি মাদ্রাসার চারতলা ভবন নির্মাণের ছয় মাস যেতে না যেতেই পলেস্তারা খসে পড়ছে। উপজেলার মধ্য বগুড়া নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। ভবনটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল কালাম আজাদ। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই ভবনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চারপাশের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সিমেন্টের পরিমাণ কম ও নিম্নমানের বালু ব্যবহার করার অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। নির্মাণকাজের সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদার তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি।

মধ্য বগুড়া নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভবনটিতে পাঠদান শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে। যেভাবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে ভবনটি ২০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. আজমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। এ কারণে ঠিকাদারের ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে ভবনটির পলেস্তারার কাজ আবার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দশমিনায় ভবন নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে খসে পড়ছে পলেস্তারা