পিটিয়ে কুমির হত্যা বন্য প্রাণীর প্রতিও সহানুভূতি দরকার
Published: 1st, April 2025 GMT
একসময় বাংলাদেশের নদ–নদী ও খালে কুমিরের দেখা মিললেও দখল-দূষণ, খাদ্যসংকটসহ নানা কারণে মিঠাপানির কুমির বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০০০ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন মিঠাপানির কুমিরকে বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সুন্দরবনের লবণাক্ত এলাকাতেই এখন কুমিরের বিস্তার রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মাদারীপুরের নদ–নদীতে কালেভদ্রে কুমির চলে আসার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। কুমির নিয়ে জনমনে নানা জনশ্রুতি চালু থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাই বলে ফাঁদ পেতে কুমির ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু সে রকমই একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে দেখলাম মাদারীপুরের কালকিনিতে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নতুন আন্ডারচর গ্রামের একটি খালে গত শনিবার দুপুরে জেলেদের সহযোগিতায় ফাঁদ পেতে কুমিরটিকে আটকে ফেলা হয়। পরে উৎসুক জনতা কুমিরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। কুমিরটি প্রায় আট ফুট দৈর্ঘ্য ও দুই ফুট প্রস্থ।
বিষয়টি এমন নয় যে কুমিরটি হঠাৎ করেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল। কিছুদিন ধরেই সেখানকার পালরদী নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদে কুমিরটিকে দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনও মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে। এরপরও কুমিরটিকে জীবিত উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসন করতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ দায় এড়াতে পারে না। তারা কুমিরটিকে উদ্ধার করতে লোক পাঠায় ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে কুমিরটি মারা গেছে।
বন্য প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ। আমরা মনে করি, কুমিরটি হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের কুমির বিচ্ছিন্নভাবে সুন্দরবন থেকে আসার সম্ভাবনা বেশি। ফলে কুমির নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নদ–নদীতে কুমির দেখা গেলে স্থানীয় লোকেরা যাতে আতঙ্কিত না হন, এর জন্য সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
ভবিষ্যতে যাতে কুমিরসহ বন্য প্রাণী হত্যা বন্ধ করা যায়, এ জন্য প্রশাসন, বন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। মাদারীপুর উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যদি কুমিরটি উদ্ধারে আন্তরিক হতো, তাহলে এই হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যেত। শুধু মানুষ নয়, বন্য প্রাণীর প্রতিও সহানুভূতি প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস