ঈদের আগের নিস্তবদ্ধতা ভেঙে পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ঈদের দিনের ধারাবাহিকতায় পরদিন আরো জমজমাট সৈতক। পর্যটকরা ঘুরছেন, আনন্দ করছেন; বালিয়াড়ীতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, দলবেঁধে সাঁতার কাটছেন। সব মিলে হোটেল-মোটেল থেকে শুরু সৈতকের বালুপ্রান্তরে ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা পর্যটকদের সবর উপস্থিতি দেখা গেছে।
ঈদের দিন সোমবার কক্সবাজার ও আশপাশের পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) চিত্র বদলে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসেছে সমুদ্র অবগাহনে; তাদের পদচারণায় গমগম করছে পুরো কক্সবাজার। সৈতকে ঢেউয়ের সঙ্গে জলখেলায় মেতেছে মানুষ। অনেকে স্পিটবোডে চড়ে আনন্দ করছেন।
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের মেলা বসেছে সমুদ্র সৈতকে। ছবি: রাইজিংবিডি
আরো পড়ুন:
পাঁচ নায়িকার ‘হাই ভোল্টেজ’ ঈদ
১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঈদ
পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করা হয়েছে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁগুলো। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররাও নেমেছেন পূর্ণোদ্যমে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ৯ দিনের ছুটি থাকায় এবার চাকরিজীবীরা পরিবারসহ ভ্রমণে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আর কক্সবাজার বরাবরই ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে। সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে পাহাড়, নদী, ঝরনাসহ নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের সমারোহ রয়েছে।
হোটেল-মোটেল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, রমজানের আগে চার মাসে প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন। গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রায় ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবারও দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইনে ও ফোনে কক্ষ বুকিং দেওয়া হয়েছে।
২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়। তারকা মানের হোটেলগুলোতে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। শহর ও মেরিন ড্রাইভ এলাকার ৫০০-এর বেশি হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের মেলা বসেছে সমুদ্র সৈতকে। ছবি: রাইজিংবিডি
হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “বাইরের পর্যটকেরা মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য আগে থেকেই অনলাইনে হোটেল বুকিং নেওয়া ভালো।”
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, “আমরা আশা করছি, এবারের ছুটিতে লাখো পর্যটক আসবেন। সেজন্য পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি।”
রমজান মাসে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁগুলোও নতুন করে চালু হচ্ছে। কলাতলীর একটি রেস্তোরাঁর পরিচালক মাহমুদুল হক বলেন, “রমজানে ব্যবসা বন্ধ থাকায় স্টাফদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। ঈদ শেষে মঙ্গলবার থেকে সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। রেস্তোরাঁ সংস্কার ও রঙ করা হয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটন জোনের অন্তত ৭০০ রেস্তোরাঁ রমজানে বন্ধ ছিল।
লাবণী পয়েন্টের জেলা পরিষদ মার্কেট ও আশপাশের বালিয়াড়িতে শামুক-ঝিনুক, শুঁটকিসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুত হয়েছেন।
ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, রমজানে দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসা ভালো চলেনি। তবে এবার পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করছেন তিনি।
সৈকতে চেয়ার-ছাতা ব্যবসায়ী, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকের পরিচালকদের পাশাপাশি ঘোড়ার মালিকরাও প্রস্তুত।
ঘোড়া সমিতির সভাপতি ফরিদা আক্তার বলেন, “পুরো রমজানে পর্যটকের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। তবে ঈদের ছুটিতে ভিড় বেড়েছে।”
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের মেলা বসেছে সমুদ্র সৈতকে। ছবি: রাইজিংবিডি
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ টহল জোরদার করেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক টহল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সক্রিয় রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটকদের নির্বিঘ্ন সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। সৈকতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পর্যটকদের হয়রানি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পর্যটকশূন্যতার কারণে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলোর কক্ষ ভাড়া ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। বন্ধ ছিল পর্যটননির্ভর রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য ব্যবসা। এবার ঈদের ছুটিতে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশার করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ঈদ র ছ ট ত ব যবস য় রমজ ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।
গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।
গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।
বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।
পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান