পাহাড়, নদী ও ঝরনার কারণে খাগড়াছড়ি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সারা বছরই জেলাটি ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ থাকে। আর বড় কোনো উৎসবের ছুটি হলে তো কথাই নেই! এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্থানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, খালি নেই হোটেল-মোটেল।

গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলার আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, গুহা, হর্টিকালচার পার্ক, দেবতা পুকুর, মায়াবিনী লেক, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরসহ সব পর্যটনকেন্দ্র ছিল লোকে লোকারণ্য। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এসব জায়গা বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোয় লেগে ছিল ভিড়। এ ছাড়া পিকআপ (চান্দের গাড়ি), জিপসহ ভ্রমণের অন্য যানবাহনগুলোতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে।

খাগড়াছড়ি জেলার পিকআপের (চান্দের গাড়ি) লাইনম্যান সৈকত চাকমা বলেন, ঈদের দিন ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁদের ১০০টি গাড়ি বুকিং আছে। অনেক পর্যটক গাড়ি না পেয়ে বিকল্প উপায়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শুধু তা–ই নয়, কক্ষ খালি না থাকায় হোটেল থেকে পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার ‘হোটেল গাইরিং’-এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘হোটেলের সব রুম বুকিং ছিল। আমার জানামতে, খাগড়াছড়ির কোনো হোটেল খালি নেই এবার।’

খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন পর্যটক বাড়ছে। গতকালও দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।’

গতকাল আলুটিলা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিম উল হাসান। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে তাঁর কয়েকজন স্থানীয় বন্ধু আছেন। প্রায় সময় তাঁদের কাছে আলুটিলা পাহাড়ের ছবি ও ভিডিও দেখে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। অবশেষে চলতি বছর সেখানে যেতে পেরেছেন। আলুটিলা পাহাড় থেকে শহর দেখাটা তাঁর কাছে অসাধারণ লেগেছে।

খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার পার্কের টিকিট চেকার ইউসুফ বলেন, ঈদের দিন পার্কটিতে দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন। ঈদের পরদিন এসেছেন তিন হাজারের বেশি। যেহেতু এখনো ছুটি চলমান, আশা করছেন প্রতিদিনই দর্শনার্থী বাড়বে। পর্যটক আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁমালিকেরাও। ‘সিস্টেম রেস্তোরাঁ’-এর কর্মচারী আচিং মারমা বলেন, তাঁদের রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন লোকজন আসছে। এ ছাড়া আগামী শনিবার পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে।

ঈদ–আনন্দ বাড়াতে পর্যটকেরা ছুটে গেছেন পার্বত্য এই জেলায়। তাঁদের এই আনন্দকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ করতে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরফিন জুয়েল। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে অতিরিক্ত পর্যটক হলেও নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই। ঈদ উপলক্ষে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা টহলে আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ট ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা