ইন্ডাস্ট্রিতে ‘মেগাস্টার’ শাকিব একাই কেন, কী বললেন সিয়াম?
Published: 5th, April 2025 GMT
একসময় ঢাকাই সিনেমার রমরমা অবস্থা ছিল। নায়ক রাজরাজ্জাক, আলমগীর, জসীম ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। পরবর্তীতে মান্না, সালমান শাহের নাম অবধারিতভাবে উঠে আসে। একসঙ্গে একাধিক মেগাস্টার ঢাকাই চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে। সবই এখন অতীত। দীর্ঘদিন ধরে একা ইন্ডাস্ট্রিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢালিউড কিং শাকিব খান। তার ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’, ‘মেগাস্টার’ নানা নামে ডেকে থাকেন।
শাকিবের পর নতুন করে অন্তত তার সমপর্যায়েও কেউ আসতে পারেননি। ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে মেগাস্টার বলতে তাকেই বোঝায়। একসময় একাধিক মেগাস্টার নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রি চলেছে। তাহলে এখন সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্ন রাখা হয় চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের কাছে।
সিয়াম আহমেদ বলেন, “এখন হবে না। মেগাস্টার বানানোর জন্য যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির সিঙ্গেল স্ক্রিন থাকতে হয়। আমি মেগাস্টার নিয়ে বলছি। আমরা ভালোবেসে অনেককে ‘মেগাস্টার’ বানিয়ে ফেলি, সুপারস্টার বলে ফেলি। কিন্তু মেগাস্টারের সত্যিকারের সংজ্ঞা কী? রজনীকান্ত সাউথ ইন্ডিয়ার মেগাস্টার। বলিউডে শাহরুখ খান মেগাস্টার। অর্থাৎ যে আইকনিক ফিগার। হলিউডে মেগাস্টারের ব্যাপারটা বিভিন্ন ঘরানার উপরে নির্ভর করে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সিঙ্গেল স্ক্রিন হলো মেগাস্টার তৈরির কারখানা। যে ইন্ডাস্ট্রির সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যায়, সে ইন্ডাস্ট্রিতে মেগাস্টার তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে সিয়াম আহমেদ বলেন, “আপনাকে ওই মানুষের ভেতরে ঢুকতে হবে, তাদের ভালোবাসা নিয়ে আসতে হবে, যারা কষ্টের টাকায় টিকিট কিনে বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখেন। এই বিষয়টাই আমাদের এখানে একেবারে কমে গেছে। এখন মাল্টিপ্লেক্স প্রধান হয়ে উঠছে। এটার হিসাব-নিকাশ আলাদা। মাল্টিপ্লেক্স কনটেন্ট নির্ভর। কিন্তু ওই উন্মাদনা অন্য ব্যাপার।”
শাকিব খান এই সময়ে অভিনয়ের জার্নি শুরু করলে হিসাবটা আলাদা হতো। তা উল্লেখ করে সিয়াম আহমেদ বলেন, “আমি শাকিব ভাইয়াকে অনেক অ্যাপ্রিসিয়েট করি। সামনাসামনি তাকে অনেকবার বলেছি। কারণ শাকিব ভাই সিঙ্গেল স্ক্রিনে ২০ বছর পার করে এসেছেন। শাকিব ভাই যদি এখন জার্নি শুরু করতেন তবে তার হিসাব আলাদা হতো। শাকিব ভাই সবসময়ই স্টার। কিন্তু তার হিসাবটা আলাদা হতো। শাকিব ভাই যেখান থেকে তার ভক্ত-অনুরাগী পেয়েছেন, সেটা যেকোনো শিল্পীর জন্য আশীর্বাদ।”
১৫-২০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে পারলে মেগাস্টার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে— সঞ্চালকের এ মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সিয়াম আহমেদ বলেন, “টিকে থাকলেই মেগাস্টার হওয়া যাবে তা নয়। বরং পূর্বের সব কাজকে টেক্কা দিয়ে নতুনভাবে আসতে পারলে মেগাস্টার হওয়া সম্ভব। শাকিব ভাই সময়ের সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন, প্রমাণ করেছেন।”
ঈদুল ফিতরে বেশ কটি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো— ‘বরবাদ’ ও ‘জংলি’। ‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার ইধিকা পাল। ‘জংলি’ সিনেমায় সিয়ামের বিপরীতে রয়েছেন শবনম বুবলী। দুটো সিনেমাই দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র ত
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসমান পথশিশুদের নিয়ে এলইইডিও-র অন্যরকম আয়োজন
কমলাপুর রেলস্টেশনের ভাঙাচোরা প্ল্যাটফর্মে বোতল কুড়িয়ে কিংবা হাত পেতে খাবার জুটত হাসান আলী মুসাফিরের। বয়স তখন পাঁচ কিংবা ছয়। রাতে স্টেশনের পাশে ঘুমিয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই তাড়িয়ে দিত পুলিশ।
এক রাতে স্টেশনের ইঞ্জিনের ছাদে উঠে পড়ে সে-তার ছোট্ট বন্ধুও সঙ্গে ছিল। বন্ধুকে টানতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় সে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসার সময় খোঁজ নেওয়া হয় তার পরিবারের, কিন্তু কোনো সন্ধান মেলে না।
একপর্যায়ে দায়িত্ব নেয় অলাভজনক সংগঠন লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এলইইডিও)। তখন থেকেই তাদের আশ্রয়ে বড় হয় হাসান। এখন নবম শ্রেণির ছাত্র সে। শিখেছে গ্রাফিক ডিজাইনসহ নানা হাতের কাজ। স্বপ্ন-একদিন পুলিশ হয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে।
দুই দশকে ৩০-৩৫ হাজার শিশুর পুনর্বাসন
হাসানের মতো হাজারো শিশুর জীবনের বাঁক ঘুরেছে এলইইডিও-র হাত ধরে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় আড়াই দশকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার সুবিধাবঞ্চিত ও পরিবারহারা শিশুকে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছে তারা। কেউ কেউ ফিরে গেছে পরিবারের কাছে, আবার কেউ থেকে গেছে সংগঠনের আশ্রয়ে-গড়ে তুলেছে নিজের ভবিষ্যৎ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এমন ৩০০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী আনন্দভ্রমণের। স্থান ছিল ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদী গার্ডেন। সকাল থেকে চলেছে চকলেট দৌড়, পিলো পাসিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সব মিলিয়ে উৎসবমুখর এক দিন।
পথ থেকে আশ্রয়ে
এলইইডিওর সংগঠকরা জানান, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল পাচার, নিখোঁজ ও ভাসমান শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়ন। কর্মীরা প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যেসব শিশুর পরিবারের সন্ধান মেলে না, তাদের উদ্ধার করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যদি পরিবারের হদিস না মেলে, প্রথমে নেওয়া হয় ‘শেল্টার হোমে’, পরে ‘পিস হোমে’।
ঢাকার কমলাপুর ও কদমতলীতে রয়েছে দুটি শেল্টার হোম, আর ওয়াশপুরে একটি পিস হোম। শেল্টার হোমে প্রায় ২৫ জন ও পিস হোমে প্রায় শতাধিক শিশুর থাকার ব্যবস্থা রযেছে। শেল্টার হোমে থাকা শিশুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলতে থাকে, ব্যর্থ হলে পাঠানো হয় সরকারি ছোট মনি নিবাসেও। পিস হোমে থাকা শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়, শেখানো হয় বিভিন্ন কারিগরি কাজ।
এছাড়া ঢাকার কদমতলী, সদরঘাট, এয়ারপোর্ট, মিরপুর, কমলাপুর ও তেজগাঁওয়ে ‘স্কুল আন্ডার দ্য স্কাই’ নামে ছয়টি মুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা করছে সংগঠনটি। খোলা আকাশের নিচে বসে পথশিশুরা সেখানে শেখে অক্ষর আর জীবনের নতুন দিশা।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পথশিশুরা
‘এলইইডিও’র উদ্যোগে এই শিশুরাই অংশ নিয়েছে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপে, আর ২০২৩ সালে ভারতে পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলার গৌরবও অর্জন করেছে তারা।
বিশেষ শিশুর গল্প: মালেকা আক্তার
কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে ট্রেনে উঠে ঢাকায় চলে এসেছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মালেকা আক্তার। স্মৃতিশক্তি দুর্বল, জন্মগতভাবে এপিলেপসিতে আক্রান্ত। তাকে উদ্ধার করে ‘এলইইডিও’।
এখন সে সংগঠনের পিস হোমে থাকে, স্কুলে যায়। শেখানো হয়েছে সেলাই ও ক্রাফটের কাজ। একসময় হাঁটতেও কষ্ট হতো তার, এখন নিয়মিত চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ। হাসতে হাসতে বলল, “এখানে আমি নিরাপদ, নিজের মতো করে বাঁচতে পারি।”
যে স্কুলে পড়েছেন, এখন সেই স্কুলেই শিক্ষক
মো. নিজাম হোসেনের গল্প যেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। রায়েরবাজারের ছেলেটি বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর ঘরহারা হয়। একসময় ভাসমান জীবনে জড়িয়ে পড়ে। ‘এলইইডিও’র কর্মীরা খুঁজে পেয়ে তাকে ভর্তি করান স্কুলে। এরপর পঞ্চম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়।
বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগে পড়ছেন নিজাম। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডস স্টেডিয়ামে পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছেন। এখন ‘এলইইডিও’র স্ট্রিট স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
নিজামের ভাষায়, “আমি যে স্কুলে পড়েছি, আজ সেই স্কুলেরই শিক্ষক। এখানে ভাসমান শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করাই।”
তার আঁকা ছবি সংগ্রহ করেছেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী, ছাপা হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্যালেন্ডারেও। ভবিষ্যতে জাতিসংঘে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
দিনভর হাসি, আনন্দ
বিকেলের দিকে মঞ্চে পুরস্কার বিতরণ। মাইকে নাম ঘোষণা হতেই শিশুদের উল্লাস-পিলো পাসিংয়ে কমলাপুরের বিজয়, চকলেট দৌড়ে হাবিবা, পিস হোম থেকে শামীম। মাঠ জুড়ে হাততালি আর হাসি।
প্রতি বছরই এমন আয়োজন করে ‘এলইইডিও’। অংশ নেয় ‘স্কুল আন্ডার দ্য স্কাই’-এর শিক্ষার্থী, শেল্টার ও পিস হোমের শিশুরা।
এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন, বোর্ড সদস্য তুষার আহমেদ ইমরান, এবং ফ্রেন্ডস অব স্ট্রিট চিলড্রেনের চেয়ারম্যান মাইক শেরিফ।
ফরহাদ হোসেন বলেন, “আড়াই দশক ধরে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে আছি। এবার ৩০০ শিশুকে নিয়ে এসেছি। রাষ্ট্র যদি আমাদের সঙ্গে এগিয়ে আসে, এই শিশুরাই ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে উঠবে।”
শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে শিশুরা গেয়েছে দেশাত্মবোধক ও জনপ্রিয় গান। অতিথি মাইক শেরিফ গাইলেন ‘আমার হাড় কালা করলাম রে’ শিশুদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। বিকেলের রোদে সবার যৌথ ছবি তোলার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবের দিনটি- ভাসমান শিশুরা ফিরল মুখভরা হাসি নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
ঢাকা/এস