ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র ইমামোগলুর প্রতি জনসমর্থন কতটা
Published: 8th, April 2025 GMT
ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তুরস্কে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। বিক্ষোভে কতজন অংশ নিয়েছেন সেটির আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব নেই। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এটি গত এক দশকে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘একটি অপরাধী সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, ঘুষ নেওয়া, চাঁদাবাজি, বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করা ও টেন্ডার জালিয়াতি।’ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, অবশ্যই আদালতে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যে কারও বিচার করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে রাস্তায় ‘সহিংসতার আন্দোলন’ কোনো কাজে আসবে না।
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা ওজগুর ওজেল এ বিক্ষোভকে উৎসাহিত করছেন। ইমামোগলুর মুক্তি ও আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাবিতে একটি পিটিশনের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন তিনি।
ইমামোগলু কেন জনপ্রিয়
ইমামোগলু ২০২৮ সালের নির্বাচনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠানো এবং কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল হওয়ার কারণে কৌশলগতভাবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
যদিও এ সবকিছু পাশ কাটিয়ে সিএইচপি গত ২৩ মার্চ ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত করেছে।
ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সেখানকার অবকাঠামো, সামাজিক পরিষেবা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়নের জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে নির্বাচন করেন ইমামোগলু। সে সময় তিনি খুবই সাদামাটা প্রচারণা চালিয়েছিলেন। নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একে পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন। একে পার্টির প্রার্থী ওই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাপক বিতর্কের মুখে নতুন করে আবার নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনেও ইমামোগলু জয়ী হন। দ্বিতীয়বারও তিনি জাঁকজমক ছাড়া প্রচারণা চালিয়েছেন।
ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সেখানকার অবকাঠামো, সামাজিক পরিষেবা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন করায় তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসওএএসের আন্তর্জাতিক অধ্যয়নের প্রভাষক জিয়া মেরাল বলেন, ইমামোগলু যেসব কারণে জনপ্রিয় তার একটি হলো তাঁর ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন সদয়, বন্ধুত্বপূর্ণ, স্পষ্টবাদী ও খোলামনের মানুষ। তিনি বিভেদের রাজনীতি করেন না, যা এই সময়ে তুরস্কের রাজনীতিতে বিরল।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় ভোটগ্রহণ শুরু
পুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে আজ সোমবার ভোট দিচ্ছেন কানাডার জনগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা নির্বাচনের আগে প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি কানাডায় দেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মার্ক কার্নির প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে। কার্নি রাজনীতিতে নতুন মুখ। তিনি এর আগে কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন।
গতকাল রোববার নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ওই দিন দেশটির ভ্যাঙ্কুভারে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১১ জন নিহত হন, আহত হন অনেকে।
এ ঘটনায় মার্ক কার্নি তাঁর নির্বাচন প্রচারণা স্থগিত করেন। তিনি ও কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী পিয়েরে পলিয়েভরে তাঁদের চূড়ান্ত প্রচারণায় ওই মর্মান্তিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
প্রাণহানির এ ঘটনা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। তবে ক্যালগেরির মাউন্ট রয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডুয়েন ব্র্যাট বলেন, তিনি মনে করেন না এ ঘটনা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করবে।
আরও পড়ুনকানাডায় উৎসবে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৯ জন নিহত২৭ এপ্রিল ২০২৫ইপসোস ও অ্যাংগাস রিডের করা আলাদা জরিপে দেখা গেছে, পলিয়েভরের কনজারভেটিভ দলের তুলনায় কার্নির লিবারেল দল ৪ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল। শেষ মুহূর্তে সামান্য এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোববার ইপসোসের করা এক জরিপে লিবারেল দল ৪২ শতাংশ ও কনজারভেটিভ দল ৩৮ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছে।
এর আগে শনিবার অ্যাংগাস রেইডের জরিপে লিবারেলরা ৪৪ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছে আর কনজারভেটিভ দল সমর্থন করেছেন ৪০ শতাংশ মানুষ।
জরিপের ফলাফল সঠিক হলে টানা চতুর্থবারের মতো লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করতে পারে। তবে কার্নি হয়তো ৩৪৩ আসনবিশিষ্ট হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেন না। ফলে তাঁকে সরকার গঠনের জন্য ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হতে পারে।
আরও পড়ুনপদত্যাগের ঘোষণা দিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো০৬ জানুয়ারি ২০২৫গত সপ্তাহে ট্রাম্প আবারও কানাডার নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন, কানাডায় তৈরি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এগুলো চায় না। এর আগে বলেছিলেন, তিনি ‘অর্থনৈতিকভাবে চাপ’ দিয়ে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানাতে পারেন।
ব্র্যান্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কেলি সন্ডার্স বলেছেন, ‘সম্ভবত এটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। সবকিছুই যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা হুমকির কারণে আড়াল হয়ে গেছে।’
ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ৩৭ বছর বয়সী অ্যান্ডি হিল বলেন, ‘সম্ভবত আমি এবার কার্নিকে ভোট দেব; কারণ, এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।’
৬৬ বছর বয়সী বব লো দক্ষিণ ক্যালগেরিতে বসবাস করেন। সেখানে তাঁর গবাদিপশুর খামার রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে কনজারভেটিভদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।