আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে শেরপুরের কৃষক, নতুন হিমাগার নির্মাণের
Published: 10th, April 2025 GMT
শেরপুরে কয়েক বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হচ্ছে। আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা। এ জেলায় দুটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হিমাগার থাকলেও চাহিদার তুলনায় জায়গা অপ্রতুল। তাই, বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে লোকসান গুনছেন কৃষকরা।
আলু সংরক্ষণের জন্য দ্রুত বড় আয়তনের একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি নতুন হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে কৃষকদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে শেরপুরে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষকরা ৫ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ৯৩ হাজার ৮১৬ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭০৬ টন।
শেরপুরে সরকারিভাবে দুটি হিমাগার আছে। যেখানে যথাক্রমে ১ হাজার ও ২ হাজার টন করে মোট ৩ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। জেলার একমাত্র বেসরকারি হিমাগার তাজ কোল্ড স্টোরেজে ১০ হাজার টন আলু সংরক্ষণের সুযোগ থাকলেও হিমাগারে প্রচণ্ড চাপ পড়ায় কৃষকরা জায়গা পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক ট্রলি ও ট্রাকে আলু বোঝাই করে এনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হিমাগারে জায়গা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকেই আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না। ফলে, বাধ্য হয়ে তারা কম দামে আলু বিক্রি করছেন। এতে চাষের খরচও উঠছে না।
নকলা উপজেলার কৃষক গণি মিয়া বলেছেন, “আলু ঘরে রাখলেই নষ্ট হয়ে যায়। এখন আলুর দাম অনেক কম। তবু, কম দামেই আলু বিক্রি করে দিলাম। কিছুদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে ভালো দাম পেতাম। পাঁচ ট্রলি আলু এনে চার দিন রাস্তায় বসে থেকেও হিমাগারে রাখতে পারিনি।”
সদর উপজেলার চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, “আমি এবার ২০০ মণ আলু পেয়েছি। শুধু বীজ আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছি। বাকিগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিলেও যে দাম বাজারে আছে, সে দামে বিক্রি করলে লস হবে। কোল্ডস্টোরেজ আলু রাখতে পারলে আর লস হতো না।”
পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বকসীগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল হানিফ মিয়া বলেন, “গত বছর কোল্ডস্টোরেজে জায়গা পেয়েছিলাম। সেজন্য এবার বেশি আলু আবাদ করেছি। কিন্তু, এবার তো জায়গাই পেলাম না। এবার আমার একবারেই লস। নতুন একটা কোল্ডস্টোরেজ তৈরি হলে কৃষকদের অনেক উপকার হবে।”
নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “আমি ৫০ বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য এখানে এসেছিলাম। তিন দিন ঘুরেও হিমাগারে জায়গা পাইনি। গাড়িভাড়া দিয়েও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, কম দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।”
সরকারি হিমাগারে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। বেসরকারি তাজ কোল্ড স্টোরেজে ৫ টাকা ৮১ পয়সা খরচে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। সরকারি হিমাগারে জায়গার সংকট ও বেসরকারি হিমাগারে অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেকেই আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না।
তাজ কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের ধারণক্ষমতার তুলনায় আলু সংরক্ষণের চাহিদা বেশি। এ কারণে অনেক কৃষককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।”
শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণের চাপ কিছুটা বেড়েছে। আমরা কৃষকদের বলতে চাই, তারা যেন ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেজন্য স্বল্প মেয়াদে দুই-তিন মাস বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে, দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখা জরুরি। আলু উৎপাদনের তুলনায় হিমাগারে জায়গা কম থাকায় কৃষকরা ঝামেলায় পড়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যতটুকু সম্ভব কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতাও করে যাচ্ছি।”
শেরপুর বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক বিজয় কুমার দত্ত বলেন, “এ জেলাতে একটি বেসরকারি হিমাগার আছে। সেটিও আমাদের বিসিকের ভেতরে। বেসরকারি পর্যায়ে আমরা প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যদি নতুন হিমাগার করতে আগ্রহী হন, তাহলে আমরা তাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ব সরক র ক ষকদ র কম দ ম ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে বিএনপির সংঘর্ষের সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলা
নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপির একদল কর্মী তাঁর ওপর হামলা করলেও তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আইয়ুব খান সরকার। তিনি বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের নরসিংদীর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। এলোপাতাড়ি কিলঘুষিতে তাঁর মাথা ফেটে গিয়ে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে।
আজ ভোর পাঁচটার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. ইদন মিয়া (৬০) নামের একজন নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সকাল থেকে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে অবস্থান করছিলেন আইয়ুব খান সরকার।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আলোকবালীর সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের খবর নিতে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করছিলেন হতাহত ব্যক্তিদের স্বজন, স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকেরা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপির একদল কর্মী যমুনা টিভির সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা জানতে চান, যমুনা টিভির সংবাদে ঘটনাটিকে কেন ‘বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ’ লেখা হয়েছে। তাঁদের দাবি, ঘটনাটি ঘটেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। দ্রুত সেটি সংশোধনের দাবি করেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, এ সময় সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকার তাঁদের বলেন, স্থানীয় লোকজন, বিভিন্ন সোর্স ও পুলিশের বক্তব্য নিয়ে তিনি প্রতিবেদনটি করেছেন। এখানে কোনো ভুল নেই। এ কথা বলার পরপরই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আইয়ুব খান সরকারের গায়ে হাত তোলেন। এ সময় তাঁদের উপর্যুপরি কিলঘুষিতে মাথা ফেটে যায় তাঁর। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) কক্ষে আশ্রয় নেন তিনি।
হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আশিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যমুনা টিভির সংবাদে কেন বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ বলা হয়েছে, তা নিয়েই প্রথমে তর্কাতর্কি শুরু হয়। আইয়ুব খান সরকার বারবারই এটা তো তাঁর লেখার কিছু নয়, ওসি ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন বলছিলেন। এরপরই ‘লিখলি কেন’, ‘এখনই ঠিক কর’ বলে হামলা করা হয়। তাঁকে উপর্যুপরি কিলঘুষি মারা হয়। ঠেকাতে গিয়ে তিনিও (আশিকুর) কিলঘুষি খেয়েছেন।
সদর হাসপাতালের আরএমও ফরিদা গুলশানারা কবীর বলেন, হামলার ঘটনায় সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথার ডান পাশে চারটি সেলাই লেগেছে। মাথায় আঘাত করার কারণে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।