বেকারত্ব ও বিদেশে কাজের আশায় বাংলাদেশি তরুণরা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ২২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উদ্বিগ্ন পরিবারগুলো মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

বাংলাদেশের মস্কো দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানদের ফেরত আনার আবেদন জানিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ আকরাম হোসেন, যিনি জানান, তিনি ও তার ভগ্নিপতি সাইপ্রাসে চাকরির আশায় একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় যান। পরে তারা বুঝতে পারেন, তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে। খবর এএফপির।

আকরাম বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি যে আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এজেন্সি বলেছিল শুধু রাশিয়ার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমরা রাজি হয়ে যাই। কিন্তু পরে দেখা গেল, আমরা একেবারে যুদ্ধের মুখোমুখি।

তিনি আরও জানান, তিনি সেনেগালের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন, তবে তার ভগ্নিপতি এখনও রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে রয়েছেন।

ইয়াসিন শেখের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজের আশায় রাশিয়ায় যান তিনি। পরে ডিসেম্বর মাসে তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২৭ মার্চ ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হন বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।

ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম বলেন, ঈদের সময় তার এক বন্ধু ফোন করে জানায় যে ইয়াসিন শহীদ হয়েছে। পরে রাশিয়ান এক কমান্ডার আমাদের ফোন দেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ছেলের লাশ ফেরত আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি, যেন তার মা শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে পারেন।

এদিকে, মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফারহাদ হোসেন জানান, আমরা ইয়াসিনের বিষয়ে অবগত এবং রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, মানবপাচার সংশ্লিষ্ট ঘটনায় এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়টি মামলা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে।

বিশ্বজুড়ে সেনা সংগ্রহে রয়েছে রাশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরির লোভ দেখিয়ে তরুণদের রিক্রুট করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন রয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ