‘বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে একদিন মুক্ত-স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াব’
Published: 13th, April 2025 GMT
এক মাস পরই চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা। আমার এখন পড়াশোনায় মগ্ন থাকার কথা। আপ্রাণ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার মন তো পড়ে আছে গাজায়। চাইলেও তাই পড়ার টেবিলে মন বসাতে পারছি না। গাজায় আমাদের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বজনদেরও কারও বাড়ির অস্তিত্ব নেই। প্রায় ছয় মাস ধরে ক্যাম্পে অবস্থান করছে আমার পরিবার। মা-বাবা আর পরিবারের সদস্যদের জন্য সব সময় দুশ্চিন্তা হয়। প্রতিদিন কথা বলারও সুযোগ হয় না। এর মধ্যেই খবর পেয়েছি, গত সপ্তাহে আমার পরিবার যে ক্যাম্পে অবস্থান করছিল, সেখানে কামান দিয়ে গোলা ছুড়েছে ইসরায়েলিরা। আমার পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বেঁচে গেলেও চারজন আহত হয়েছেন। তাঁরা এখন অনেকটা সুস্থ। হামলার পর অন্য আরেকটা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।
গাজায় প্রায় সব পরিবারের গল্পই এখন এ রকম। আমার বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজন সবার বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে তো পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে আমার পরিবারের সবাই নিরাপদে আছেন, এটাই এখন মন্দের ভালো খবর। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রায় ২০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। সবাই এখন পরিবারের লোকজনের কথা ভেবে চিন্তিত। গাজায় তো দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই আমরা যেন দুঃসংবাদের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। তবে গেল কয়েক দিনের অবস্থা বর্ণনা করার মতো নয়। এত খারাপ অবস্থা আগে হয়নি, এতটুকু বলতে পারি।
ফেসবুক বা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই আমার ভাইবোনদের করুণ পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে। মৃত্যুর খবর সামনে চলে আসছে। এসব থেকে দূরে থাকতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও কম ব্যবহার করছি। আমাদের যেহেতু সামনে পরীক্ষা, তাই পড়াশোনার মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি।
তবে ফিলিস্তিনে পরিস্থিতির অবনতির পর থেকেই আমাদের বাংলাদেশি বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষকেরা সবাই নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। ক্লাসে গেলেই আমাদের বাড়ির খবর জানতে চায় বন্ধুরা। আমাদের শিক্ষকেরা সব সময় দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীকেই সমান চোখে দেখেন। এখন তাঁরা যেন এটি আরও বেশি করে চর্চা করছেন। যেন আমরা মাথা থেকে দুশ্চিন্তা সরিয়ে অন্য সবার মতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি। আমরাও যথাসম্ভব পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।
আমার মেডিকেল কলেজের সহপাঠীসহ বাংলাদেশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি জানি, এ দেশের সব মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে। ৬ এপ্রিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আমার মেডিকেল কলেজের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও ওই দিন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, ইসরায়েলিদের বর্বরতার প্রতিবাদ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবে। বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে একদিন মুক্ত-স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াব।
আরও পড়ুনযে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম১৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র আম দ র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া বখাটে ও অসহায় বাবা
গতকাল ছিল বাবা দিবস। নিউজ ফিড থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবলই বাবাকে নিয়ে আবেগ জড়ানো কথামালা। মায়ের পরে বাবাই একমাত্র শব্দ, যার প্রতি মানুষের আজন্ম দুর্বলতা কিংবা দায়বদ্ধতা! বলা যায়, গর্বের সঙ্গেই আমরা বাবাকে লালন করি হৃদয়ের একান্ত গহিনে। আমাদের মনে সেই এইটুকুন বয়সে স্বপ্নের বীজ বপন করে দেন বাবা। যে বীজ চারাগাছ হয়ে আকাশমুখী হতে থাকে। আমরাও বাবার দেখানো স্বপ্ন ধরতে শুঁয়াপোকা থেকে প্রতিনিয়ত বর্ণিল প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হই! তবে কতটা রূপান্তর ঘটে আমাদের, সে হিসেব মেলাতে যান না বাবা। তারা কেবল জানেন নিজের সর্বস্ব সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিলিয়ে দিতে।
এমনটাই চোখে পড়েছে রোববার সমকালে প্রকাশিত খবরে। বাবা দিবসেই প্রকাশিত খবরে আমরা দেখেছি, বগুড়ায় অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিবাদ করেছেন বাবা। এই প্রতিবাদই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রিকশাচালক বাবা শাকিল হোসেনের। মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। শাকিলের বোন রেশমি আক্তার আশা বলেন, ‘আমার ভাতিজি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। জিতু কিছুদিন পরপর তাকে বিয়ে করতে চায় এবং উত্ত্যক্ত করে। আমার ভাই ১৪ বছরের মেয়েকে বিয়ে দিতে নারাজ। এ নিয়ে আমার ভাই ও জিতুর মধ্যে কয়েক দিন আগে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষুব্ধ হয়ে জিতু ও তার লোকজন শনিবার বিকেলে ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
এমন ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের পরও ভুক্তভোগী মামলা করতে ভয় পাচ্ছিলেন। এক দিন পর নিহত রিকশাচালক শাকিল হোসেনের স্ত্রী মালেকা বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামকে প্রধান করে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পরে পুলিশ জিতু ইসলাম, তার দুই সহযোগী শফিকুল হাসান ও মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে– এ কথা বলতেই হবে। যদিও মামলা করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও পুলিশের আন্তরিকতা উল্লেখযোগ্য। মামলার পর পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
অবাক করার বিষয়, এ ঘটনার প্রায় দুই মাস আগে, গত ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিল। সে হত্যার ঘটনায়ও মূল আসামি নান্টুসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-৫। তার কিছুদিন আগে, ১১ মার্চ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা ও চাচাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে।
আমরা বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছি দিন দিন– এ ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। একসময় বখাটেরা ভয়ে থাকত। ভয়ভীতি দেখিয়েই ক্ষান্ত হতো। তার পর মারধর; এখন পথের বাধা সরিয়ে দিতে অভিভাবকের প্রাণ নিয়েই তারা রণে ভঙ্গ দিচ্ছে!
এসব ঘটনা কল্পনাকেও যেন হার মানায়। এমন সামাজিক অপরাধ এবং বেপরোয়া মনোভাব কোনোক্রমে বাড়তে দেওয়া যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক; সবাইকে ধরে আইনের আওতায় আনা জরুরি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন অঘটন ঠেকানো কঠিন হবে। দিন দিন তা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কাও রয়েছে!
আশিক মুস্তাফা: শিশুসাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, সমকাল
muashique@gmail.com